ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘণ’ উল্লেখ করে এ ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে কাতার। বুধবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে দূতের ভূমিকায় রয়েছে কাতার। বুধবারের বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন গাজার হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এটা পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘণ। কাতার এই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছে।’
হাসপাতালের ভেতরে হামাসের গোপন ঘাঁটি রয়েছে— অভিযোগ তুলে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ২টার আল শিফায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এবং হাসপাতালটির মহাপরিচালক ডা. মুনির আল বুর্শ বলেছেন, অভিযান শুরুর এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের স্থল বাহিনীর কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেছিলেন তার সঙ্গে। তারা বলেছিলেন, আর কিছুক্ষণ পরেই অভিযান শুরু হবে আল শিফায়।
বুধবার অভিযান শেষ হওয়ার আগেই ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, আল শিফার গোপন স্থান থেকে উল্লেকযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র- গোলাবারুদ এবং সামরিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম জব্দ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় উপত্যকার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও।
সেই সঙ্গে উপত্যকায় সব ধরনের ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। যুদ্ধের দুই সপ্তাহ পর খাদ্য চিকিৎসা উপকরণবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দিলেও গাজায় জ্বালানি তেল সরবরাহে বরাবরই আপত্তি জানিয়ে আসছে আইডিএফ।
এদিকে চিকিৎসা উপকরণ ও জ্বালানির অভাবে গাজায় একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ২২ টি হাসপাতাল ও ৪৯টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই তালিকায় আল শিফাও রয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে ওষুধ ও জ্বালানির অভাবে চিকিৎসা সেবা প্রায় বন্ধ রয়েছে উপত্যকার বৃহত্তম এই হাসপাতালটি। রোব এবং সোমবার হাসপাতাল চত্বরে মোট ১৭৯ জন মৃত রোগীকে দাফন করা হয়েছে।
তারপরও রোগী ছিলেন হাসপাতালটিতে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলি সেনারা যখন অভিযান শুরু করে, তখনও ৬৫০ জন রোগী আল শিফায় ভর্তি ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন অন্তত অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনি, যারা ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা বোমা বর্ষণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এছাড়া হাসপাতালটির ১ হাজারেরও বেশি ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীও আল শিফায় আটকা পড়েছিলেন ইসরায়েলি অভিযানের সময়।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল হাগারি দাবি করেছেন, রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও বেসামরিক লোকজনকে হাসপাতাল থেকে সরে যেতে সহায়তা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দূতের ভূমিকায় রয়েছে কাতার। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর যাদেরকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস, তাদের মুক্তিদান প্রকিয়ায়ও সরাসরি সংশ্লিষ্ট রয়েছে কাতার।
সূত্র : এএফপি
এমআইসি