ইসরায়েলি বিমান আসার খবরে বিমানবন্দরে হামলা, ইহুদির খোঁজে তল্লাশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ৩০, ২০২৩, ০৯:৫৫ এএম

ঢাকাঃ টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। অবিরাম এই হামলায় ইতোমধ্যেই ৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে দানা বাঁধছে ক্ষোভ।

এরই অংশ হিসেবে রাশিয়ায় একটি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ইসরায়েল থেকে একটি বিমান পৌঁছানোর পর ওই বিমানবন্দরে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় তারা ইহুদিবিরোধী নানা স্লোগান দেন এবং তেল আবিব থেকে আসা লোকজনের খোঁজ করেন।

এমনকি বিমানবন্দরের বাইরে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও ইসরায়েলি পাসপোর্টধারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। রোববার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাশিয়ার দাগেস্তান বিমানবন্দরে এই ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান আসার খবরে দাগেস্তান বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছেন বিশাল জনতা। এসময় বিক্ষুব্ধদের অনেকে ইহুদিবিরোধী স্লোগান দেন। ওই হামলার পর রাশিয়াকে ‘সমস্ত ইসরায়েলি নাগরিক এবং সমস্ত ইহুদিদের’ রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল।

হামলার বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার দাগেস্তানের মাখাচকালার বিমানবন্দরে দৌড়ে প্রবেশ করছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় তারা তেল আবিব থেকে আসা লোকজনকে খুঁজছিল বলে জানা গেছে।

বিবিসি বলছে, বিক্ষুব্ধ এসব মানুষের মধ্যে অনেকে দৌড়ে রানওয়েতে চলে যান এবং বিমানটিকে ঘিরে ফেলেন। রাশিয়ার এভিয়েশন এজেন্সি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে আসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রোসাভিয়াসিয়া আরও বলেছে, হামলার এই ঘটনার পর এখন বিমানবন্দরটি আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ‘অস্থায়ীভাবে বন্ধ’ থাকবে।


এদিকে বিমানবন্দরে হামলার এই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকশ বিক্ষুব্ধ লোক বিমানবন্দর টার্মিনালে হামলা চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু লোক ফিলিস্তিনি পতাকা সাথে রেখেছিলেন এবং তারা সবাই ‘আল্লাহু আকবর’ (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) স্লোগান দেন।

এর আগে কিছু বিক্ষোভকারী মাখাচকালার বিমানবন্দরের বাইরে গাড়ি থামিয়ে সেগুলোতে তল্লাশি চালান বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে। এসময় তারা মূলত ইসরায়েলি পাসপোর্টধারী ব্যক্তিদের খোঁজ করছিলেন।

হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, ইহুদি ও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্ররোচনার বিরুদ্ধে রাশিয়াকে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।


বিবিসি বলছে, কাস্পিয়ান সাগরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত উত্তর ককেশাসের প্রধানত মুসলিম রাশিয়ান প্রজাতন্ত্র দাগেস্তানে প্রায় ৩১ লাখ মানুষ বসবাস করে। দাগেস্তান সরকার বলেছে, বিমানবন্দরে হামলার ঘটনায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া দাগেস্তান সরকার গাজার পক্ষে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি নাগরিকদের শান্ত থাকার এবং এই ধরনের বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। মূলত গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বের বহু দেশে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।

দাগেস্তান সরকার টেলিগ্রামে বলেছে, ‘বিমানবন্দর পরিচালনায় বাধা দেওয়ার মতো অবৈধ কাজ চালিয়ে যাবেন না এবং বিমানবন্দরের কর্মচারীদের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না।’

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মস্কোতে অবস্থানরত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কাজ করছেন। ইসরায়েল ‘যেকোনও জায়গায় ইসরায়েলি নাগরিক এবং ইহুদিদের ক্ষতি করার চেষ্টাকে গুরুতরভাবে দেখে’ বলেও দাবি করেছে ওই মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল আশা করে রাশিয়ার আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সকল ইসরায়েলি নাগরিক এবং ইহুদিদের রক্ষা করবে এবং দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে ও ইহুদি ও ইসরায়েলিদের প্রতি লাগামহীন উস্কানির বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেবে।’

এমআইসি