ঢাকাঃ বন্যা, খরা, ঝড় ও দাবানলসহ জলবায়ুর বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ছয় বছরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে অন্তত চার কোটি শিশু। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৩.১ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে যে, 'ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মনোযোগের অভাব রয়েছে। এই বিষয়টিতে নজর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায় সংস্থাটি।' খবর এএফপির
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাস্তুচ্যুত শিশুদের মর্মান্তিক জীবনের গল্প। প্রতিবেদনের সহ-লেখক লরা হিলি বলেন, 'এই তথ্যে পুরো চিত্রটি উঠে আসেনি। এর বাইরেও অনেকে আরও মানবেতর জীবনযাপন করছে।'
সুদানের শিশু খালিদ আব্দুল আজিমের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে প্রতিবেদনে। শিশুটির গ্রামে তীব্র বন্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সময় গ্রামজুড়ে একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। আব্দুল আজিম বলে, ‘আমরা আমাদের জিনিসপত্র হাইওয়েতে সরিয়ে নিয়েছি। আর আমরা এখানেই বাস করেছি কয়েক সপ্তাহ ধরে।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ২০১৭ সালে নিজেদের বাড়ি দাবানলের আগুনে পুড়তে দেখে শিশু দুই বোন মিয়া ও মাইয়া। মিয়া বলেন, 'আমি ভয় পেয়েছিলাম, হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সারা রাত জেগে থাকতাম।'
জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট বাস্তুচ্যুতদের পরিসংখ্যানে সাধারণত বয়স অনুযায়ী হিসাব উঠে আসে না। তবে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে কাজ করে বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি তালিকা প্রকাশ করে ইউনিসেফ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে চার ধরনের জলবায়ু বিপর্যয়ে (বন্যা, ঝড়, খরা এবং দাবানল) ৪৪ দেশে ৪৩.১ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বাস্তুচ্যুতের ঘটনার ৯৫% বন্যা ও ঝড়ের কারণে হয়েছিল। লরা হিলি বলেন, 'পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।'
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বন্যা ও পানির কারণে আগামী ৩০ বছরে ৯৬ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত হতে পারে ১০.৩ মিলিয়ন শিশু। ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৭.২ মিলিয়ন শিশু।
ইউনিসেফের প্রকাশিত মোট বাস্তুচ্যুতির অর্ধেকেরও বেশি ঘটনা ঘটেছে চীন, ফিলিপাইন ও ভারতে। এই তিন দেশে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ২২.৩ মিলিয়ন। এরমধ্যে চীনে এই সংখ্যা ৬.৪ মিলিয়ন। ভারতে শিশু বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ৬.৭ মিলিয়ন। আর ফিলিপাইনে ৯.৭ মিলিয়ন। প্রতিবেদনে এর জন্য দেশগুলোর ভৌগোলিক অবস্থা, মৌসুমি বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় আর বৃহৎ জনসংখ্যাকে দায়ী করা হয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া শিশুর সংখ্যা ৩.৩ মিলিয়ন।
শিশু বাস্তুচ্যুতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ছোট দ্বীপ রাজ্যগুলোতে। যার মধ্যে অনেকেই জলবায়ু জরুরি অবস্থার কারণে অস্তিত্বের হুমকির মুখোমুখি। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলোতে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
২০১৭ সালে হারিকেন মারিয়ার আঘাতে ছোট ক্যারিবিয়ান দ্বীপ ডোমিনিকাতে ৭৬ শতাংস শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদানে বন্যার কারণে সর্বাধিক শিশু বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সংখ্যাটি যথাক্রমে দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার ১২ ও ১১ শতাংস।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেন, 'যারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা ভয়ের পরিবেশে বেড়ে উঠবে। তারা বাড়ি ফিরবে, স্কুল আবার শুরু করবে, নাকি আবার সরে যেতে বাধ্য হবে এই উদ্বেগ তাদের বয়ে বেড়াতে হবে।'
চীন, ভারত ও ফিলিপাইনের শিশুদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি বলে জানানো হয়। বিশাল জনসংখ্যা ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এসব দেশে সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলেও জানানো হয়।
প্রতিবেদনটিতে বাস্তুচ্যুত শিশুরা কীভাবে বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে সেটিও তুলে ধরা হয়েছে। এসব ঝুঁকির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাদের পিতামাতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অথবা শিশু পাচারকারীদের হাতে পড়া।
এমআইসি