লিবিয়ার ভয়াবহ বন্যা মনুষ্যসৃষ্ট না প্রাকৃতিক দুর্যোগ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩, ১২:৫২ পিএম

ঢাকাঃ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের দারনা শহরে ভয়াবহ বন্যায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় শহর দারনার উপকূলে ভেসে যাওয়া মরদেহ উদ্ধারে এখন চলছে অভিযান। যত সময় যাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা ততই বেড়ে চলছে।

লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল এবং ঝড় পরবর্তী বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩০০ জনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।


দারনা শহরে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে মূলত দু’টি বাঁধ ভেঙে, সেগুলোর পানি নিচে গড়িয়ে শহরে চলে আসায়। বাঁধগুলোর পানি যখন শহরে প্রবেশ করে তখন সেখানে সুনামি সদৃশ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

দারনার মেয়র জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাঁড়িয়ে যেতে পারে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বর্ণনাতীত এ বন্যায় শহরটির একটি অংশ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।


আর ভয়াবহ এ বন্যার পর লিবিয়ার কিছু রাজনীতিবিদ প্রশ্ন তুলছেন, এটি কী নিছকই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাকি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ ছিল?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি, সরকারি অবকাঠামোগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং কয়েক বছরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের মতো বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুতই করতে পারেনি লিবিয়া।  

দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে লিবিয়া দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এখন দুই ভাগে দু’টি আলাদা সরকারের অধীনে চলছে দেশটি।


আর বিভক্ত হওয়ার কারণে বাঁধের মতো জরুরি অবকাঠামোগুলোতে যে সংস্কার কার্য চালানো হবে, সে ধরনের কোনো বাজেটই পাওয়া যায়নি।

 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে গত মঙ্গলবার দারনার ডেপুটি মেয়র আহমেদ মাদ্রুদ বলেছিলেন, এ দুটি বাঁধ সেই ২০০২ সাল থেকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এর অর্থ সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ২০১১ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে আসা সরকার— কেউই দেশের জরুরি অবকাঠামোগুলো সংরক্ষণ করতে পারেনি বা করেনি।

গত বছর ওমর আল-মুখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দারনার বাঁধ দুটি জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে নয়ত সেখানে বন্যা দেখা দিতে পারে। তাদের এমন হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বাঁধ দুটি নিয়ে কোনো কাজই করা হয়নি।

দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলা

লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে গত রোববার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঘূর্ণিঝড়টির আগে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে জানায়, শুধুমাত্র উপকূলীয় এলাকায় কারফিউ জারি থাকবে এবং সেখান থেকে সবাইকে সরে যেতে হবে। কিন্তু পরেরদিন কর্তৃপক্ষ জানায়, দারনার অবস্থা ভয়াবহ।

এখানে মূলত স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যদি ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করা হতো তাহলে এত মানুষের মৃত্যু হতো না।

এছাড়া লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে সরকারি অবকাঠামো নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির কারণেও এমন করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে।

সূত্র: আল জাজিরা

এমআইসি