ইথিওপিয়ার তাইগ্রে সংকট: অনাহারে প্রাণ গেছে ১৪০০ মানুষের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আগস্ট ১৮, ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম

ঢাকাঃ পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চলে চুরি ও লুটপাটের অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার খাদ্য সহায়তা স্থগিতের পর থেকে অনাহারে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। গত চার মাসে তাইগ্রেতে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে বলে দেশটির সরকারি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) চুরির অভিযোগে প্রায় চার মাস আগে তাইগ্রেতে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তাইগ্রে কর্তৃপক্ষের এক তদন্তে দেখা যায়, দাতব্য সংস্থার খাদ্য চুরির সাথে অন্তত ৫০০ জন জড়িত বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

২০২০ সালে ইথিওপিয়ার উত্তরের তাইগ্রে অঞ্চলে ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাতে দেশটির এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

গত নভেম্বরে আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) মধ্যস্থতায় ইথিওপিয়ার সরকার ও তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) মাঝে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর সংঘাতের অবসান ঘটে।

এই সংঘাতে ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করেছিল ইরিত্রিয়ার সৈন্যরা। যুদ্ধের বেশিরভাগ সময় ওই অঞ্চলটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল; যে কারণে সেখানে মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়।

নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকান ইউনিয়নের দূত ওলুসেগুন ওবাসাঞ্জো বলেন, তাইগ্রেতে দুই বছরের সংঘাতে প্রায় ৬ লাখ মানুষ মারা গেছেন। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় যুদ্ধ, অনাহার এবং স্বাস্থ্যসেবা ঘাটতিকে দায়ী করেছেন গবেষকরা।

ডব্লিউএফপি এবং ইউএসএইড প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে সহায়তা করার জন্য তাইগ্রেতে খাদ্যপণ্য ও অন্যান্য জরুরি পণ্যসামগ্রী মজুত করেছিল। কিন্তু গত এপ্রিলে সংস্থা দুটি দেখতে পায়, তাদের অনুদান স্থানীয় বাজারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার পর সেখানে খাদ্য সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেয় তারা। তবে অনুদান সরিয়ে নেওয়ার পেছনে কে বা কারা রয়েছেন, সেবিষয়ে কিছু জানায় সংস্থা দুটি।

চলতি সপ্তাহে এএফপির একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা কেবল অপরাধমূলক কার্যকলাপে চোখ বন্ধ রাখতে এবং ত্রাণ বিতরণ চালিয়ে যেতে পারিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিনিধি তাইগ্রের রাজধানী মেকেলেসহ অন্যান্য শহর ও গ্রামীণ বাজারে ডব্লিউএফপি এবং ইউএসএইডের মতো সহায়তা সংস্থার প্রতীক যুক্ত প্যাকেটের খাবার দেখতে পেয়েছে। তবে সেগুলো কীভাবে বাজারে পৌঁছাল কিংবা ত্রাণ সহায়তা পাওয়া ব্যক্তিরাই নগদ অর্থের প্রয়োজনে বিক্রি করছে কি না তা পরিষ্কার নয়।

পরে গত জুনে দারিদ্রপীড়িত ইথিওপিয়ার অন্যান্য অংশেও খাদ্য সহায়তা স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ডব্লিউএফপি এবং ইউএসএইড।

তাইগ্রের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিশনার গেব্রেহিওয়েট গেব্রেজগাবের বিবিসিকে বলেছেন, খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কেবল তাইগ্রের পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এক হাজার ৪১১ জন মানুষ অনাহারে মারা গেছেন।

তিনি বলেন, তাইগ্রের অন্য তিনটি অঞ্চল থেকে এখনও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়নি। সেগুলো পেলে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। দাতব্য সংস্থার ত্রাণসামগ্রী চুরি যাওয়ার ঘটনায় ৪৯২ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এছাড়া এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার দায়ে ইতিমধ্যে ১৯৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গেব্রেহিওয়েট।

সূত্র: বিবিসি।


এমআইসি