সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং: গ্রেপ্তার ১০ জন কোন দেশের নাগরিক?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আগস্ট ১৭, ২০২৩, ০৬:১৮ পিএম

ঢাকাঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারকারী ও জালিয়াতদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযান চালিয়েছে দেশটির আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার (১৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে দেশটির পুলিশ জানায়, তাদের অভিযানে ১০ বিদেশি অর্থপাচারকারী ও জালিয়াত আটক হয়েছে। এছাড়া জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, দামি জিনিসপত্র।

পুলিশের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাইপ্রাস, তুরস্ক, চীন, কম্বোডিয়া এবং নি-ভানুয়াতুর নাগরিক। অর্থপাচার ও জালিয়াতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান চালানো হয়।

মঙ্গলবার দিনভর সেন্তোসা কোভ, তাংলিং, অর্কাড, হোল্যান্ড এবং রিভারভ্যালিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।  

এসব অর্থপাচারকারী ও জালিয়াতদের আটক করতে গুড ক্লাস বাংলো (জিসিবি), ভবন এবং স্থাবর সম্পত্তিতে হানা দেয় পুলিশ। এতে পুলিশের ৪০০ কর্মকর্তা অংশ নেন। বলা হচ্ছে সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় অর্থপাচার বিরোধী অভিযান।

বুধবার এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায় তাদের অভিযানে ৯ জন পুরুষ ও একজন নারী আটক হন। যাদের বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। তাদের সবার বিরুদ্ধে অর্থপাচার, জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ আরও জানিয়েছে আটককৃতের মধ্যে ৪০ বছর বয়সী এক পুরুষ রয়েছেন, যিনি গ্রেপ্তার এড়াতে তার দুই তলা বাংলোর বাড়ান্দা থেকে লাফ দেন। তাকে পরবর্তীতে একটি ড্রেনের ভেতর লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়।

এ অভিযানে পুলিশকে সহায়তা করছে ১২ জন। এখনো আরও ৮ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

অভিযানে এখন পর্যন্ত ১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলারের সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, গাড়ি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য মালামাল।

যে ১০ জন আটক হলেন তাদের পরিচয়

সু হাইজান: তিনি সাইপ্রাসের নাগরিক। তার বয়স ৪০ বছর। তাকে হোল্যান্ডের একটি বাংলো থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ভাং সুইমিং : ৪২ বছর বয়সী তুরস্কের এ নাগরিককে তাংলিং এলাকার একটি বাংলো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঝাং রুইজিন : তিনি চীনের নাগরিক। তার বয়স ৪২ বছর। তার সঙ্গে ৪৩ বছর বয়সী অপর এক চীনের নাগরিককে সেন্তোসা কোভের একটি বাংলো থেকে আটক করা হয়। তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

সু বাওলিন : তিনি ৪১ বছর বয়সী একজন কলম্বিয়ার নাগরিক। তাকে নাসিম রোডের একটি বাংলো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধেও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

সু জিয়ানফেং : তিনি নি-ভানুয়াতুর নাগরিক। তাকে বুকিত তিমাহতে বাংলো থেকে ধরা হয়। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওয়াং দিহাই : তিনি সাইপ্রাসের নাগরিক। তার বয়স ৩৪ বছর। তাকে অর্কাড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধেও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওয়াং বাওসেন : ৩১ বছর বয়সী চীনের নাগরিক। তাকে তাংলিংয়ের একটি বিশাল অট্টালিকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সু ওয়েনকুইয়াং : ৩১ বছর বয়সী কম্বোডিয়ার এ নাগরিককে বুকিত তিমাহর একটি বাংলো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।

যে ১০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে যাদের জাতীয়তা চাইনিজ নয়, ধারণা করা হচ্ছে তাদের ভুয়া বিদেশির পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে। আর এসব পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে চীন, তুরস্ক এবং ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে। গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।


তদন্তের অধীনে রয়েছে ১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলারের সম্পত্তি

তদন্তের অংশ হিসেবে ৯৪টি প্রপার্টি এবং ৫০টি যানবাহনের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যেগুলোর মূল্যমান প্রায় ১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলার। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার, পানীয় ও মদের বোতলের ওপর।

নিষ্পত্তি নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো— নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত সম্পত্তিগুলোর মালিক এগুলো ভোগদখল বা নিষ্পত্তি করতে পারবেন না।

এছাড়া পুলিশ ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এসব ব্যাংকে ১১০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার সমপরিমাণ অর্থ রয়েছে। জালিয়াতি যেন আর না ছড়ায় তাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে।

অপরদিকে জব্দকৃত নগদ অর্থের পরিমাণ হলো ২৩ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলার। আরও জব্দ করা হয়েছে ২৫০টিরও বেশি দামি ব্যাগ এবং ঘড়ি, ১২০টিরও বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস— যার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন, ২৭০টি অলংকার, দুটি স্বর্ণের বার। এছাড়া ভার্চুয়াল সম্পত্তির ১১টি নথিও জব্দ করা হয়েছে।

জব্দকৃত মালামালের ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। আর যেসব ঘড়ি জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি রোলেক্স, পাটেক ফিলিপের ঘড়ি দেখা গেছে। আর ব্যাগের মধ্যে রয়েছে হারমেস, দিয়র, চ্যানেল এবং লুইস ভুইটনের হ্যান্ডব্যাগ। অপরদিকে গাড়ির মধ্যে রয়েছে বেন্টলে। এছাড়া দামি মদের বোতলও পাওয়া গেছে।

সূত্র: চ্যানেল নিউজ এশিয়া


এমআইসি