ঢাকাঃ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে শস্য চুক্তি নবায়ন সংক্রান্ত আলোচনা করতে দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় পৌঁছেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন জানিয়েছে, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে মস্কোর।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈঠক আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকবে। তাদের আলোচনা থেকে কী ফলাফল বের হয়— তা জানতে আমরা সত্যিই আগ্রহী।’
‘এছাড়া তুরস্কের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের একটি গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে, ইউক্রেনে রুশ বাহিনী বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর তুরস্ক একাধিকবার মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে মধ্যস্ততার ভূমিকা নিয়েছে। তাই আলোচনার ফলাফল জানা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়ও,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন পেসকভ।
ইউক্রেন ও রাশিয়া— উভয়ই বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গম ও ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে ইউক্রেনের গুদামগুলোতে আটকা পড়েছিল ২৬ লাখ টন গম,ভুট্টা ও কয়েক লাখ টন সূর্যমুখী তেলবীজ।
এদিকে ইউক্রেনে শস্য আটকে থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে আটা-ময়দা-ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম। এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়া এই গম-ভুট্টা ছাড়ের জন্য জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত বছর আগস্টে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সমঝোতা চুক্তি করেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন।
তারপর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে সেই চুক্তির মেয়াদ। সর্বশেষ মেয়াদবৃদ্ধির তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৭ আগস্ট এই চুক্তি শেষ হতে যাচ্ছে।
কিন্তু এই চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াতে রাজি নয় বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে মস্কো। গত ১৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, ‘এই চুক্তির পেছনে আমাদের কিছু শর্ত ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য— সেসবের কোনোটিই মানা হয়নি। ভবিষ্যতে কী হবে— তা এখন বলা খুবই কঠিন; তবে আমরা বলতে পারি— মস্কো আর এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী নয়। আমরা অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি, অনেক ছাড় দিয়েছি…কিন্তু আর নয়।’
২০২২ সালের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল — কৃষ্ণ সাগরের জাহাজ চলাচলের পথ থেকে সব মাইন অপসারণ করতে হবে এবং শস্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দিতে হবে।
অন্যদিকে রাশিয়ার শর্ত ছিল, ইউরোপের ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোকেও সরবরাহ করতে হবে খাদ্যশস্য।
কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পর দেখা যায়, ইউক্রেনের মোট গমের আশি শতাংশেরও বেশি নিয়ে গেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এশিয়া ও আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ এই সরবরাহ থেকে কোনো খাদ্যশস্য পায়নি।
এই ব্যাপারটিতে যে রাশিয়া খুবই ক্ষুব্ধ— তা গত কয়েক মাস ধরেই জানান দিচ্ছে মস্কো। গত জুনে আফ্রিকান নেতাদের সঙ্গেও এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের শস্য বিশ্ববাজারে পৌঁছেছে ঠিকই, কিন্তু আফ্রিকার দরিদ্র অনাহারী লোকজনের তাতে কোনো উপকার হয়নি।’
সূত্র : এএফপি, আরটি
এমআইসি