মিয়ানমার : জান্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ২১, ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ গত আড়াই বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় টালমাটাল মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং তাদের আয়ের উৎসে আঘাত হানতে এবার দেশটির বৃহত্তম দুই সরকারি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্যাংক দু’টি হলো মিয়ানমার ফরেইন ট্রেড ব্যাংক এবং মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এই দু’টি ব্যাংকই ক্ষমতাসীন জান্তার বড় আর্থিক উৎস।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ওয়াশিংটন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে থাইল্যান্ডের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। বুধবার দূতাবাস থেকে দেওয়া এক বিৃবতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘(মিয়ানমারে) অভ্যুত্থান এবং অভূত্থান পরবর্তী সহিংসতার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে আসছে। এই পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদের ডলার সংগ্রহের উৎসে কাটছাঁট কারার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সে লক্ষ্যেই মিয়ানমার ফরেন ট্রেড ব্যাংক এবং মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ট্রেজারি বিভাগ।’

‘গত আড়াই বছর ধরে মিয়ানমারে যে ভয়াবহ সহিংসতা চলছে— সেজন্য ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার আওতায় আনাই আমাদের লক্ষ্য,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। বর্তমান সামরিক সরকারের সর্বোচ্চ নির্বাহী সংস্থা মিলিটারি কাউন্সিলের প্রধানও তিনি।

ক্ষমতা দখলের পর কারাগারে বন্দি করা হয় এনএলডি’র শীর্ষ নেত্রী সুচিসহ দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। রাজধানী নেইপিদোর একটি সামরিক আদালতে সুচির বিচার চলছে এবং বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় ইতোমধ্যে তার ২৫ বছর কারাবাসের সাজাও ঘোষণা করা হয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পরপরই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ। ঢালাওভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধমে সেই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে জান্তা। তাদের এই কঠোর পদক্ষেপের জেরে ইতোমধ্যে দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ।

ক্ষমতা দখলের পর সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংসহ সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। সেই তালিকায় এবার যোগ হতে যাচ্ছে সামরিক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে বিবেচিত মিয়ানমারের বৃহত্তম দুই সরকারি ব্যাংক।

জান্তা অবশ্য জানিয়েছে, আসন্ন এই পদক্ষেপের ব্যাপারে তাদের তেমন উদ্বেগ নেই। জান্তামুখপাত্র জাউ মনি তুন বুধবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব সংবাদমাধ্যম এমডব্লিউডিতে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন, ‘মিয়ানমারের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে আরও সংকটের মধ্যে ফেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা যখন একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের পথে অগ্রসর হচ্ছি, তখন এ ধরনের পদক্ষেপ সেই প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেবে— যা পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়।’

এদিকে, ব্যাংকক বিজনেস নিউজসহ বিভিন্ন থাই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— যদি সত্যিই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, সেক্ষেত্রে জান্তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।

কারণ, যে ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রায় সবগুলো দেশে ছড়িয়ে আছে সেগুলোর শাখা।


এমআইসি