ভারত-পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের আঘাত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ১৬, ২০২৩, ১০:৫১ এএম
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের তাণ্ডবে গুজরাটে পাঁচ শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে।

ঢাকাঃ ভারত-পাকিস্তান উপকূল বরাবর আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বিপর্যয় মূলত গুজরাট উপকূল ও পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত বরাবর আছড়ে পড়ে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুজরাটে ‘অতি তীব্র’ ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আঘাত হানার পর বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছ উপড়ে পড়ে রাজ্যটিতে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি রাজস্থানের দিকে এগোচ্ছে এবং সন্ধ্যা নাগাদ এটি দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বুলেটিনে বলেছে, ‘শুক্রবার গভীর রাত আড়াইটার সময় বিপর্যয় নালিয়া থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত অবস্থায় ছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে সরতে থাকবে এবং শুক্রবার ভোরে দুর্বল হয়ে সাইক্লোনিক স্টর্মে পরিণত হবে। এটি একইদিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ রাজস্থানের ওপরে নিম্নচাপে পরিণত হবে।’

এদিকে গুজরাট রাজ্যে আঘাত হানার সময় প্রবল বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ার সৃষ্টি হয়। রাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, গুজরাটের বিভিন্ন স্থানে ৫২৪ টিরও বেশি গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। একইসঙ্গে বিপর্যয়ের আঘাতের পর প্রায় ৯৪০ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

এনডিটিভি বলছে, ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আরব সাগরজুড়ে শক্তি সঞ্চয় করার পরে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুজরাটের জাখাউ বন্দরের কাছে ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার থেকে ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়ে। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরে শক্তি হারাতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি।

আর শুক্রবার গভীর রাত আড়াইটার সময় ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।

ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের প্রধান ডা. এম মহাপাত্র বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে ১৬ এবং ১৭ জুন রাজস্থানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ কারণে অস্থায়ী আবাসন কাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং উচ্চ গতির বাতাস, উচ্চ জোয়ার ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ার বিষয়ে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে।

এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন। এসময় গির বনে সিংহ-সহ অন্য বন্য প্রাণীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেন মোদি।

গুজরাট সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের আঘাতের আগে উপকূলীয় এবং নিচু এলাকা থেকে ৯৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে ট্রেন পরিষেবাতেও।

এছাড়া আগামীকাল পর্যন্ত মাছ ধরার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জাহাজ নোঙর করা হয়েছে। দেবভূমি দ্বারকার দ্বারকাধীশ মন্দির এবং গির সোমনাথ জেলার সোমনাথ মন্দির বৃহস্পতিবার ভক্তদের জন্য বন্ধ ছিল।

এর পাশাপাশি গুজরাটের জামনগর বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ডিজেল ও পেট্রোল মজুত করা হয়েছে।

পাকিস্তানের সিন্ধে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়ের’ প্রভাবে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়েছে উপকূলের বসতি অঞ্চলে। 

এদিকে পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ১৩০ কিলোমিটার। এ সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ২০-২৫ ফুট।

পাকিস্তানের কেটি বন্দরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্তও ঘূর্ণিঝড়টি প্রবলভাবে আঘাত হানেনি বলে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে।

আইএমডির বরাত দিয়ে পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি পাকিস্তান থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এখনো পাকিস্তানের কোনো এলাকায় আঘাত হানেনি। তবে মাঝরাতের পর আাঘাত হানতে পারে। সবাই নিরাপদে থাকুন।’

এদিকে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ থেকে ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে সিন্ধে আরও একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। সিন্ধের মূখ্যমন্ত্রী করাচি ও হায়দ্রাবাদ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

বুইউ