ঢাকাঃ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরে সহিংসতা থামছে না। নতুন সহিংসতায় বিগত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারীও রয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন।
জাতিগত দাঙ্গার কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এ রাজ্যটিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে খামেনলক এলাকায় গোলাগুলির ঘটনার তাদের মৃত্যু হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের কয়েকজনের শরীরে চিহ্ন কাটা ও একাধিক বুলেটের আঘাতে হওয়া জখম রয়েছে। আহতদের বেশ কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য ইম্ফলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে কুকি জঙ্গিরা খামেনলোকে বেশ কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীকে হত্যা ও আহত করে। অক্ষত গ্রামবাসীরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ এলাকায় ছুটে যেতে শুরু করলে অপেক্ষমাণ জঙ্গিরা পলাতক গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালায়।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরপরই খামেনলোকে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হয়। পরে সেখানে কয়েক মিনিট উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির পর জঙ্গিরা পিছু হটে।
জাতিগত সংঘর্ষের কারণে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। আর সর্বশেষ এই ঘটনা মণিপুর রাজ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া গতকাল রাতের ঘটনার পর শিথিল কারফিউ আবারও কঠোর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মণিপুর রাজ্যের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাঝে উত্তেজনা চলছে। গত মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কুকি উপজাতিরা তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে ৩ মে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ ঘিরে ওই দিন পার্বত্য এই রাজ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই সহিংসতায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এতে কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলনও হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।
সম্প্রতি ভারতের হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।
এদিকে, জাতিগত সহিংসতায় বিধ্বস্ত ভারতের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে মে মাসের শেষের দিকে সফরে গিয়েছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেসময় তিনি সহিংসতায় জড়িত মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে শান্তি বজায় রাখার এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বুইউ