ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সাহায্যের আকুতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ২৩, ২০২২, ১১:২১ এএম

ঢাকাঃ ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে আফগানিস্তানে। সীমান্তবর্তী ও দুর্গাম এলাকা হওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত দুর্দশা এই অবস্থাকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন করেছে তালেবান সরকার। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হাজার হাজার বাড়ি মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে হাজারের বেশি মৃত্যুর পাশাপাশি দেড় হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল বুধবার দিনের প্রথম দিকে শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে ছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। যার গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫১ কিলোমিটার।

এদিকে ইউরোপীয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএসএসসি) জানায়, উৎপত্তিস্থল থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরেও ভূমকম্পটির তীব্রতা অনুভূত হয়, যার প্রভাব পড়ে  আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতের অন্তত ১২ কোটি মানুষের ওপর।

বিবিসি বলছে, ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অন্তত দেড় হাজার আহত হয়েছেন। এছাড়া অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ মাটির তৈরি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব পাকতিকা প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জাতিসংঘ জরুরি আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা করছে। ভারী বর্ষণ ও সম্পদের অভাবে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষ ও উদ্ধারকারীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে বহু গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া এসব এলাকার বহু রাস্তা এবং মোবাইল ফোন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছে। আর তাই মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

আফগানিস্তান একটি মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। তালেবানের সিনিয়র কর্মকর্তা আব্দুল কাহার বলখি জানান, সরকার আর্থিকভাবে জনগণকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে সহায়তা করতে অক্ষম।

তিনি বলেন, এইড এজেন্সি, প্রতিবেশী দেশ এবং বিশ্ব শক্তিগুলো সাহায্য করছে। কিন্তু এর পরিমাণ আরও অনেক বাড়ানো দরকার। কয়েক দশক ধরে এমন বিধ্বংসী ভূমিকম্প দেখা যায়নি।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সংস্থাটি দুর্যোগ মোকাবেলায় 'পুরোপুরি সক্রিয়' হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য দল, চিকিৎসা সরবরাহ, খাদ্য এবং জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সাহায্যকারীরা ওই এলাকায় পৌঁছেছেন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সীমান্ত লাগোয়া পাকতিকার জেলা গায়ানে। জঙ্গলে ঘেরা জেলাটিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ছোট ছোট গ্রামে অল্প কয়েকটি করে বসতি। মঙ্গলবার গভীর রাতে যখন ভূমিকম্প হয়, তখন গোটা গায়ানই ঘুমিয়ে ছিল। একই অবস্থা গায়ানের পাশের জেলা বরমালেরও।

আয়তনে গায়ানের দ্বিগুণ বারমাল। কয়েকটি শহর, শহরতলিও রয়েছে। সেখানে রয়েছে প্রশাসনিক দফতর। তবে গোটা জেলায় কোনো স্কুল ও হাসপাতাল নেই। আহতদের  চিকিৎসার জন্য বারমাল থেকে হেলিকপ্টারে করে আহতদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্য প্রদেশে। কোথাও ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই চলছে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানের খোস্ত শহর থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার (২৭ মাইল) দূরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে এবং এটার উৎপত্তি ছিল মাটির ৫১ কিলোমিটার (৩১ মাইল) গভীরে।

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক লেখক হেদায়েতুল্লাহ পাকতিন বলেন, এ অঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়ি নির্মাণে ঐতিহ্যগতভাবে মাটি, পাথর ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়। এখানে কংক্রিটের ঘর বিরল। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে এমন ভূমিকম্পে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়।  হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে অনেকগুলি ফল্ট লাইন রয়েছে। কিন্তু ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় ভূমিকম্প ঠেকানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই।

আফগানিস্তান ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। কারণ এই দেশটি ভূতাত্ত্বিকভাবেই এমন একটি সক্রিয় অঞ্চলেই অবস্থিত। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিট্রিয়ান অ্যাফেয়ার্স-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক দশকে দেশটিতে ভূমিকম্পে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর ভূমিকম্পের কারণে দেশটিতে বছরে গড়ে মৃত্যু হয় ৫৬০ জনের।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ৭০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভূমিকম্পে। গড়ে প্রতি বছর ৫৬০ জনের ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় আফগানিস্তানে। ২০২২ সালের মতো তীব্র ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০২ সালেও। সেবারও হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছিল আফগানিস্তানে। ১৯৯৮ সালে একই ধরনের তীব্রতার ভূমিকম্পে সাড়ে চার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন দেশটিতে। তার পরও সতর্ক হয়নি আফগান প্রশাসন।

এমবুইউ