প্রথমবারের মতো কিয়েভের বাইরে যুদ্ধের ময়দানে জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ৩০, ২০২২, ১০:৫১ এএম

ঢাকাঃ রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাজধানী কিয়েভের বাইরে যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সৈন্যদের খোঁজ-খবর নিতে এবং ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো দেখতে রোববার খারকিভ অঞ্চলে যান তিনি।

জেলেনস্কির দপ্তর সূত্রে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। খারকিভে গিয়ে সৈন্যদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘দায়িত্ব পালন করায় আমি আপনাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ দিতে চাই।’ পরে তিনি স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে ‘শহর রক্ষা না করতে পারা’র দায়ে চাকরিচ্যুত করেন।

খারকিভ ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। রাশিয়া গত কয়েকদিন ধরে এ শহরে গোলাগুলি বন্ধ রেখেছে। রুশ সামরিক অভিযানের প্রথম মাসে শহরটি তীব্র বোমাবর্ষণের মুখোমুখি হয়। বোমার আঘাতে এর বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

খারকিভের আশপাশের শহরগুলো থেকে রুশ সেনারা ধীরে ধীরে পেছনের দিকে যাচ্ছে। তবে শহরটি এখনো রুশ কামানের সীমার মধ্যে রয়েছে। জেলেনস্কি শহরটি পরিদর্শন করে আসার পর আজ সেখানে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।

টেলিগ্রাম চ্যানেলে জেলেনস্কির দপ্তর একটি ভিডিও পোস্ট করেছে, যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ খারকিভ অঞ্চলে ২ হাজার ২২৯টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খারকিভ, অন্যান্য শহর ও গ্রামসহ যেখানে অমঙ্গল নেমে এসেছিল, সেখানে আমরা পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণ করব এবং জীবন ফিরিয়ে আনব’। 

ভিডিওতে দেখা যায়, সৈন্যরা খারকিভের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো জেলেনস্কিকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। পাশাপাশি সড়কের পাশে পড়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক যান দেখাচ্ছেন। জেলেনস্কি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে রয়েছেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের বেসামরিকীকরণ ও নাৎসিমুক্তকরণের লক্ষ্যে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানো হচ্ছে। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমারা এই অভিযানকে বিনা উসকানিতে ‘আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়েছে।

যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রেল হাব লিমান দখলের দাবি করার পর নিকটবর্তী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্কেও আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে।

রোববার ইউক্রেন ‍যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিজ শহর ক্রেয়েই রিতে সেনাবাহিনীর একটি বিশাল অস্ত্রাগার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসের দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন শতাধিক ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ।

কোনাশেনকভ আরও বলেন, অভিযানে ইউক্রেনের আরও বেশ কয়েকটি সামরিক নিশানায় আঘাত হানা হয়েছে। দনিপ্রো অঞ্চলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের একটি এসইউ-২৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।

রাশিয়ার বিমান হামলায় সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের তিন শতাধিক সেনা নিহত হওয়া ছাড়াও ৫০টি সামরিক ইউনিট এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে, বলেন ইগর কোনাশেনকভ।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিন বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে কৌশলগত (ট্যাকটিকাল) পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে বলে বিশ্বাস করেন না তিনি।

এছাড়া রাশিয়ার সামরিক আইনানুযায়ী, ইউক্রেনের মতো সংঘাতের ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এসব অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম খুবই কড়া উল্লেখ করে কেলিন বলেন, শুধু রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লেই তা ব্যবহার করা হয়। বিবিসি ওয়ানের সানডে মর্নিং প্রোগ্রামে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এই অস্ত্র ব্যবহারের কিছু নেই।

এ বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পরপরই পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তখন একে হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এর জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও ন্যাটো জোটকেই দায়ী করেন পুতিন।

তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছিলেন, ইউক্রেন পরিস্থিতি থেকে মানুষের দৃষ্টি সরানোর জন্য এটি করা হয়েছে। নিজেদের হাতে যে এ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, তা-ও বিশ্বকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে রাশিয়া।

এমবুইউ