মারিউপোলে রাশিয়ার বিজয় ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ২১, ২০২২, ১০:৪৫ এএম

ঢাকাঃ দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর অবশেষে রুশ বাহিনীর পূর্ণ দখলে এসেছে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর মারিউপোল। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

মস্কোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শহরটির আজভস্টল কারখানায় কয়েক মাস অবস্থান নেওয়া সবশেষ যোদ্ধারা এখন আত্মসমর্পণ করেছেন।

কয়েক মাস ধরে এসব ইউক্রেনীয় সেনারা বিশাল কারখানা এলাকায় অবস্থান নিয়ে থেকেছে। এতে শহরটিতে রাশিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আটকে যায়। শুক্রবার সবশেষ যোদ্ধাদের সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অবরোধের অবসান হয়। একই সঙ্গে শহরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৫৩১ ইউক্রেনীয় সেনা সরে যাওয়ায় শহর এবং এর স্টিল কারখানা এখন ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যোদ্ধাদের লুকিয়ে থাকার স্থান উদ্যোগটির ভূগর্ভস্থ স্থাপনা রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মারিউপোলে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রধান ঘাঁটি আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় রয়ে যাওয়া ৫৩১ জন সেনাসদস্যের সবাই শুক্রবার আত্মসমর্পণ করেছে। মস্কোর দাবি, গত ১৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ৪ দিনে আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা থেকে ২৪৩৯ জন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কারখানায় থাকা সবশেষ যোদ্ধাদের সরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে তিনি বলেন, ‘আজ ছেলেদের সামরিক কমান্ড থেকে স্পষ্ট সংকেত দেওয়া হয়েছে যে তারা বাইরে যেতে পারে এবং জীবন রক্ষা করতে পারে।’

কয়েক সপ্তাহ ধরে আজভস্টল কারখানা সম্পূর্ণ ঘিরে রাখা হয়। রুশ বাহিনী সব মানবিক ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, ওই এলাকায় আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করে এবং সেখানে থাকা যোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণের দাবি জানায়।

সেখানে যারা আটকে পড়েছিলেন, তাদের অনেকেই ছিলেন বেসামরিক বাসিন্দা, যাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষজন ছিলেন।

জাতিসংঘ ও রেডক্রসের মধ্যস্থতার পর এই মাসের শুরুর দিকে তাদের সরিয়ে আনা হয়। কিন্তু ওই এলাকায় ইউক্রেনের যে যোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি না হওয়ায় রাশিয়া বন্দর নগরীর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছিল না। অনেক ইউক্রেনিয়ানের কাছে আজভস্টাল ইস্পাত কারখানার যোদ্ধারা জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছেন, যারা ইউক্রেনের প্রতিরোধ লড়াইয়ের এক প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।

সেখানে অবস্থান নেয়া ইউক্রেনের কয়েকশো যোদ্ধার মধ্যে মেরিন, ন্যাশনাল গার্ড, আজভ রেজিমেন্ট, বর্ডার গার্ড, পুলিশ এবং আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ইউনিটের সদস্যরা ছিলেন। অপর্যাপ্ত খাবার এবং পানি ছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে অবস্থান নিয়েছিলেন। পারমাণবিক যুদ্ধে সুরক্ষা দেয়ার মতো করে তৈরি চার বর্গ মাইল আয়তনের আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় অসংখ্য টানেল রয়েছে। তাদের কমান্ডার জানিয়েছেন, আহত সব সৈন্যদের রাশিয়ার বাস এবং অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

মস্কো কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই কারখানা থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৪৩৯ জন আত্মসমর্পণ করেছে। এই যোদ্ধাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা জানায়নি মস্কো। তবে এর আগে আত্মসমর্পণ করা সৈন্যদের বহনকারী বাসগুলো রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকার দিকে যেতে দেখা গেছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে তারা এই সৈন্যদের ফিরিয়ে আনতে পারবেন। তবে মস্কোর তরফ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এই সৈন্যদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী প্রাপ্য আচরণ করা হবে। কিন্তু তারা রাশিয়ার হেফাজতে থাকলে কি হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে আজভ রেজিমেন্টের সদস্য ক্ষেত্রে 'নাৎসি অপরাধী' হিসাবে বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে রাশিয়ার আইন প্রণেতারা। সেক্ষেত্রে তারা বন্দী বিনিময়ের আওতায় আসবে না। 

এই ইউনিটকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসাবে ঘোষণার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছে রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল। স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়া সদস্যদের নিয়ে ২০১৪ সালে আজভ রেজিমেন্ট গঠিত হয়েছিল যাদের একসময় ডানপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে এই বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড ইউনিট নামকরণ হয়েছে।

এমবুইউ