ঢাকাঃ বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মাংকিপক্স নামের বিরল রোগ। কীভাবে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব কিংবা কী পদ্ধতিতে এর মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন বিশ্বসেরা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অনেকে দাবি করে সমকামী পরুষদের থেকেই মাঙ্কিপক্স দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই বিরল রোগের সঙ্গে সমকামীদের কোনো সম্পর্ক এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈঠকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এরই মধ্যে মাঙ্কিপক্সের হাত থেকে নিস্তার পেতে কোন ভ্যাকসিন কার্যকরী হবে তা নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালানো হচ্ছে।
চলতি মে মাস থেকেই এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই ব্রিটেন, স্পেন, বেলজিয়াম, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং কাডানায় এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
১৮ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিভাগের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রথম একজন ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কিপক্সের সন্ধান পান। তিনি সম্প্রতি কানাডা থেকে ফিরেছেন। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, ইউ এস সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন আরও মাঙ্কিপক্সের ঘটনা সামনে আসার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। যারা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে এখনই সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কতটা কারণ রয়েছে, তা নিয়েই কাটাছেঁড়া করছে বিশ্বের চিকিৎসকমহল।
মাঙ্কিপক্স আদতে কী? কতটা ভয়াবহ এই ভাইরাস? মাঙ্কিপক্স ভাইরাস বায়ুবাহিত। এই ভাইরাসের জেরে যে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, তাকেই মাঙ্কিপক্স বলা হচ্ছে। এই রোগ হলে জ্বরে ভোগেন অনেকে। দেহে তৈরি হয় বড় বড় ফোস্কা। বর্তমানে টিকাকরণের জন্য স্মলপক্স অনেকটাই সেরে উঠেছে। এখনও পশ্চিম আফ্রিকাসহ একাধিক দেশে মাঙ্কিপক্সের দেখা পাওয়া যায়।
১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কিপক্স পাওয়া গিয়েছিল। মূলত ইঁদুর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তবে মূল চিন্তার বিষয় একজন আক্রান্তের থেকে মাঙ্কিপক্স অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাঙ্কিপক্সের থেকে স্মলপক্স অনেকটাই আলাদা। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের দেহে বড়বড় ফোস্কা পড়ে।
চলতি মাসে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে ৬ মে থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছেন ২০ জন। আর শুক্রবার ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামে প্রথমবারের মতো ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
একসময় গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যেত। এ ভাইরাসটি ১৯৮০ সালে পুরোপুরি নির্মূল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে চিকেন পক্স, এটিকে সাধারণত শৈশবের রোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা এবং শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। চিকেন পক্স পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে গুটি বসন্ত ও চিকেন পক্স উভয়েরই মিল রয়েছে।
মাঙ্কিপক্সে প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটলেও তা সীমিত। কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানরসহ কিছু প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে।
এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী প্রথম দেখা গেছে। মাদ্রিদে এরই মধ্যে ২৩ জনের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করে। আক্রান্তদের মধ্যে আটজন সমকামী পুরুষ রয়েছে।
মাদ্রিদের আঞ্চলিক স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মাদ্রিদে ভাইরাসটি ফ্লুইড কনটাক্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপে শুধু স্পেনই নয়, লিসবন এবং আশপাশের এলাকায় পর্তুগিজ যুবকদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার ২০টি সন্দেহভাজন ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
মাঙ্কিপক্সের দুটি রূপ রয়েছে। একটি পশ্চিম আফ্রিকান স্ট্রেন এবং অন্যটি মধ্য আফ্রিকান স্ট্রেন। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঙ্কিপক্স হালকা ওয়েস্ট আফ্রিকান স্ট্রেনের।
তবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া কঠিন। এর সংক্রমণ সাধারণত ফ্লুইড ট্রান্সফার, ঘা, দূষিত পোশাক বা দীর্ঘস্থায়ী মুখোমুখি যোগাযোগ কিংবা সহাবস্থানের মাধ্যমে ঘটে, যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
এমবুইউ