ঢাকাঃ দেশীয় বাজারে দাম কমানোর লক্ষ্যে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুক্রবার (১৩ মে) ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা। ভারত সরকার জানিয়েছে, যেসব রফতানি চালানের ক্রেডিট লেটার বিজ্ঞপ্তির আগে ইস্যু করা হয়েছে, শুধু সেগুলোর চালান যেতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
বৈদেশিক বাণিজ্য কর্তৃপক্ষের (ডিজিএফটি) জারি করা নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সরকার কেবল অন্য দেশের অনুরোধে রফতানি অনুমোদন করবে।
ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা সমন্বয় এবং প্রতিবেশি ও অন্য দুর্বল দেশগুলোর প্রয়োজনে সাড়া দিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ গম উৎপাদক দেশ ভারত। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কৃষ্ণ সাগর এলাকা দিয়ে গম রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বিশ্বের ক্রেতারা ভারতের গমের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে বৈশ্বিক রফতানিতে তাদের অংশ মাত্র এক শতাংশের মতো। পরিমাণ ও মূল্য উভয় দিক থেকে ভারতীয় গমের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের মোট গম রপ্তানির ৫৪ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশে। ওই বছর ভারতীয় গমের শীর্ষ ১০ ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, ওমান ও মালয়েশিয়া।
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৯ শতাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্যের বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে। হু হু করে দাম বেড়েছে গমেরও।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের রপ্তানি বন্ধ আর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ভারতীয় গমের চাহিদা বেড়েছে। ভারতের গম রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের বিকল্প হিসেবে অনেক ক্রেতাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
এ অবস্থায় বৈশ্বিক চাহিদা ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ গম রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ভারত। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশটি রেকর্ড ৬৫ লাখ টন গম রপ্তানি করেছিল। তবে চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সেই সীমা পার হয়ে গেছে তারা।
এদিকে ভারতে মার্চের তীব্র তাপপ্রবাহ ফসল উৎপাদনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি ৭.৭৯ শতাংশে উঠে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণে মারাত্মক চাপে রয়েছে ভারত সরকার। এরই জেরে গম রফতানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
তবে এই মাসের শুরুতে ভারতের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সরকার গম রফতানি সীমিত করতে চাইছে না। ওই সময়ে খাদ্য সচিব শুধাংশু পাণ্ডে বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত গমের মজুত থাকায় গম রফতানি সীমিত করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’
সম্প্রতি জার্মানি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় অভিবাসীদের এক আয়োজনে বলেন, বিশ্ব জুড়ে গম সংকট দেখা দেওয়ায় বিশ্বের মানুষের খাবার যোগান দিতে এগিয়ে এসেছে ভারতের কৃষকেরা। তিনি বলেন, ‘মানবতা যখন সংকটের মুখোমুখি হয়, ভারত তখন সমাধান নিয়ে আসে।’
টানা পাঁচ বছর রেকর্ড উৎপাদনের পর ভারত এই বছর তীব্র গরমের কারণে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনে। তাপপ্রবাহের প্রভাব ফসলের মাঠে পড়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১১১.৩ মিলিয়ন টন থেকে নামিয়ে ফেব্রুয়ারিতে ১০৫ মিলিয়ন টন নির্ধারণ করে ভারত।
এমএম