ঢাকাঃ ইয়েমেনের সাদ শহরের কারাগারে বোমা হামলার দায় অস্বীকার করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। হামলায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনের বেশি বন্দির প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবদমানপক্ষগুলোকে অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অবিলম্বে ইয়েমেনে হামলা-আগ্রাসন বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’
পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
দেশটিতে চলমান যুদ্ধের মধ্যে এমন হামলার দায় নিতে অস্বীকার করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। এদিকে কারাগারে হামলার ঘটনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুরোধে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। বৈঠকে সৌদি আরব এবং আমিরাত ছাড়াও অন্যদের পক্ষ থেকেও বিবৃতিতে নিন্দা জানানো হয়েছে।
আলাদা বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিবদমানপক্ষগুলোকে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুক্রবার সকালে ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সাদার একটি বন্দিশিবিরে হামলা চালিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমানবহর। হামলায় শিশুসহ দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে বার্তাসংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রসের ইয়েমেন শাখা।
সাদা প্রদেশের ওই বন্দি শিবিরটিতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আফ্রিকান অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। তাদের বেশ কয়েকজনও বিমান হামলায় হতাহত হয়েছেন বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন ইয়েমেন শাখা।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের টেলিভিশন চ্যানেল আল মাসিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিমান হামলায় নিহত ও আহতদের সন্ধানে বন্দি শিবিরের ধ্বংস্তুপে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। আহতদের নিকটস্থ আল জামহুরি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। তবে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে- সেই সংখ্যা জানাতে পারেনি আল মাসিরা।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি সাদা প্রদেশ। গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অন্যতম অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ড্রোন হামলা করেছিল ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীগোষ্ঠী; তার মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই এই হামলা চালাল সৌদি- আমিরাত সামরিক জোট।
সামরিক জোট অবশ্য বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছিল, খুব দ্রুত ইয়েমেনে হামলা চালানো হবে। তবে হামলার পর জোটের কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি।
গত ৭ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত ইয়েমেনে অস্থিরতার সূত্রপাত হয় ২০১৪ সালে, যখন দেশটির আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেয় হুথি বিদ্রোহীরা।
হাদির সরকারকে ফের ক্ষমতাসীন করতে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সৌদি-ইয়েমেন-আমিরাত সামরিক জোট।
কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ বছরে অন্তত ১০ হাজার শিশুসহ ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইয়েমেনে, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। এছাড়া দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বর্তমানে খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।
সূত্র: বিবিসি
আগামীনিউজ/বুরহান