পাঞ্জাবের জোড়া লাগানো দুই ভাই পেলেন সরকারি চাকরি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ২৫, ২০২১, ১২:৩২ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ ভারতের অমৃতসারের সোহনা-মোহনা। তারা যমজ ভাই, কিন্তু তাদের শরীর একটাই। দুই পা, চার হাত, দুই মাথা এবং দুটি আলাদা সত্ত্বা। এক শরীরের এমন দুই মানুষ আগেও দেখা গেছে। বেঁচে থাকার জন্য তাদের শারীরিক বাধা অনেক। কিন্তু সেই বাধা কাটিয়ে কীভাবে জীবন যুদ্ধে জিততে হয় তার উদাহরণ সোহনা ও মোহনা।

প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে পেয়েছেন সরকারি চাকরি। সেখান থেকে প্রতি মাসে তারা পাবেন ২০ হাজার রুপি। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের অমৃতসারে।

জোড়া লাগা দুই ভাই পাঞ্জাবের রাজধানী অমৃতসরে পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডের (পিএসপিসিএল) সাবস্টেশনে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) যোগদান করেছেন তারা। তারা দুই ভাই সাপ্লাই কন্ট্রোল রুমে কাজ করবেন। 

পাঞ্জাবের অমৃতসারের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম এই দুই ভাইয়ের। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন এগিয়ে। দুই জনের সত্ত্বা আলাদা হলেও দেহ একটাই। চাইলেই আলাদা কিছু করতে পারবেন না তারা। যেকোনো কাজ, খেলাধুলা, খাওয়া, ঘুমানো, পড়াশোনা সবকিছুই করতে হয় একসঙ্গে।

রাজ্যের আইটিআই থেকে ডিপ্লোমা করেছেন এই দুই ভাই। কয়েকদিন আগেই ১৯ বছর বয়সী সোহনা ও মোহনা সরকারি চাকরি পেয়েছেন। পাঞ্জাব সরকারের স্টেট পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডে তাদের চাকরি হয়েছে। মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে কাজে যোগ দিয়েছেন এই দুই তরুণ।

সোহনা ও মোহনা ডিপ্লোমা করছে, আগে থেকেই এই খবর ছিল পিএসপিসিএলের কাছে। কর্তৃপক্ষ বলে, খবর পেয়েছিলাম বিশেষভাবে সক্ষম এই দুই ভাই আইটিআই থেকে ডিপ্লোমা করছে। তারা ইলেক্ট্রিশিয়ান হতে চান। এই কাজে যথেষ্ট ঝুঁকিও আছে। এরপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সোহনার জ্ঞান খুব ভালো। তাকে সহায়তা করবে মোহনা।

পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডের প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেনু প্রাসাদ বলেন, সোহনা ও মোহনা বিরল শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবুও তারা আইটিআই থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চাকরি দেওয়ার আগে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তাতে তারা যথেষ্ট ভালো করেছে। তাদের যথেষ্ট ভালো কারিগরি জ্ঞান রয়েছে। তাই মানবিকতা থেকে নয়, যোগ্যতা দেখেই তাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।

চাকরিতে যোগদানের পর সোহনা ও মোহনা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা ছাত্রজীবন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগ্রহী হয়ে চাকরি দেওয়ায় পাঞ্জাবের রাজ্য সরকারের প্রতি তারা কৃতজ্ঞ।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, ২০০৩ সালের ১৪ জুন দিল্লির একটি হাসপাতালে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে জোড়া লাগা দুই ছেলে শিশু। তাদের হৃদযন্ত্র দুটি, দুই জোড়া হাত, কিড়নি ও স্প্যাইনাল কর্ডসও দুটি। তবে লিভার ও গলব্লাডার একটি এবং পা দুটি।

ছেলেদের এমন অবস্থা দেখে দরিদ্র বাবা মা তাদেরকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে তাদের পৃথক করার জন্য দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে (এআইআইএমএস) ভর্তি করা হয়।

তবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জীবনের ঝুঁকি থাকায় তাদের পৃথক না করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ফলে একসঙ্গেই বেড়ে উঠতে হয়েছে শিশু দুটিকে।

বাবা-মা ফেলে রেখে যাওয়ায় তাদের দায়িত্ব নেন ‘অল ইন্ডিয়া পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটি’। সেখানেই তাদের বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ সবকিছুই পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটির সহায়তায়।

চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের নাম দেওয়া হয় সোহনা ও মোহনা। 

আগামীনিউজ/বুরহান