ঢাকাঃ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জুলাই মাসে বেসামরিক লোকদের উপর একের পর এক গণহত্যা চালিয়েছে, এসব ঘটনায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে। বিবিসি’র এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এ বিষয়ক অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে ফেরা লোকজন জানান, লোকজনকে জড়ো করে এরমধ্য থেকে পুরুষদের আলাদা করে হত্যা করা হয়। যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের অনেকের বয়স ১৭ বছর। ওইসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে জানা গেছে, যাদের হত্যা করা হয়েছিলো তাদের প্রথমে নির্যাতন করা হয় এবং মারা যাওয়ার পর মাটি চাপা দেওয়া হয়।
জুলাই মাসে মিয়ানমারের সাগাইং জেলায় বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কানি শহরাঞ্চলে এমন চারটি ঘটনা ঘটে।
বিবিসি অন্তত ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এনজিও মিয়ানমার উইটনেসের সংগ্রহ করা মোবাইল ফোনের ভিডিও এবং ছবির সঙ্গে তুলনা করেছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইয়িন গ্রামে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সেখানে অন্তত ১৪ জন পুরুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এবং লাশগুলো জঙ্গলে ফেলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হত্যা করার আগে লোকজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়।
ভাই, ভাতিজা এবং আরও এক স্বজন হারানো এক নারী বলেন, আমরা এমন ঘটনা দেখতে পারছিলাম না। মাথা নিচু করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।
তিনি বলেন, আমরা অনেক অনুরোধ করেছি যেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনো কথা কানেই তোলেনি। তিনি আরও বলেন, সেনাদের বয়স ১৭ বা ১৮ হবে। তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বয়স্কও ছিল এবং এক নারীও তাদের সঙ্গে ছিল।
জুলাইয়ের শেষের দিকে জি বিন দুয়িন গ্রামের কাছে ১২টি বিকৃত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক শিশুর মরদেহও ছিল।
বেঁচে ফেরা এক ব্যক্তি বলেন, অনেককে পাথর ও রাইফেলের বাট দিয়ে মারধর করা হয়েছিলো।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের মিয়ানমারে রিপোর্টিং করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নয় এমন বেশিরভাগ মিডিয়া আউটলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে অন-দ্য গ্রাউন্ড রিপোর্টিং বা মাঠ পর্যায়ে থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিবিসি এই প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগগুলি মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী এবং সামরিক মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুনের কাছে উত্থাপন করেছে।
বিবিসি থেকে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি গণহত্যা চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেননি।
জাও মিন তুন বলেন, ‘এটা ঘটতে পারে। যখন তারা শত্রু হিসাবে আচরণ করে তখন আমাদের আত্মরক্ষা করার অধিকার আছে।’ সূত্র : বিবিসি
আগামীনিউজ/নাসির