জমিতে মজুরের কাজ করে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা, শেষে পুলিশ কর্মকর্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ১৭, ২০২১, ০৮:৫২ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ স্বপ্ন সবাই দেখে। কেউ আজীবন স্বপ্ন দেখেই যান, আবার কেউ প্রাণান্ত পরিশ্রম করে সেই স্বপ্নকে সত্যি করেন। ইলমা আফরোজ দ্বিতীয় দলে। তিনি শুধু স্বপ্নই দেখেননি।

স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য পরিশ্রমও করেছেন। এজন্যই কৃষকের মেয়ে ইলমা জমিতে মজুরের কাজ করেও পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ডে। দেশে ফিরে হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের কুন্দারকি গ্রামের বাসিন্দা ইলমা চেয়েছিলেন মায়ের দুঃখ দূর করতে। পরিবারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে। সম্ভব হলে, সুযোগ পেলে দেশের কাজে, দশের কাজে লাগতে।

সেই স্বপ্নটা সত্যি হয় তার। অবশ্য জমিতে দিনমজুরের কাজ করা ইলমার পথ চলাটা সহজ ছিল না। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। ইলমা আর তার ছোটভাইকে নিয়ে আকূল পাথারে  পড়েন তার মা। বাধ্য হয়ে জমিতে মজুরের কাজ নেন ইলমার মা। সংসারের প্রয়োজনে মায়ের সঙ্গে জমিতে দিনমজুরের কাজও করেছেন তিনি। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান।

এলাকার মানুষ তার মাকে বুঝিয়েছিল, মেয়েকে তো শেষ পর্যন্ত সংসারই করতে হবে। এত পড়াশোনা করানোর দরকার কী! তবে তাতে কান দেনটি ইলমা কিংবা তার মা। স্কুলের পাঠ কুন্দারকিতেই শেষ করেছিলেন ইলমা। তবে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দিল্লিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। দর্শন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি।

সেখান থেকেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ স্কলারশিপে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ইলমা। কিন্তু  বিমান ভাড়ার টাকা ছিল না তার। সাহায্য চাইতে শেষে গ্রামের মানুষের দ্বারস্থ হন।  গ্রামেরই এক কাকা তার বিদেশ পড়তে যাওয়ার কথা জেনে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন।

অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তর পড়ার পাশাপাশি প্যারিসে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। নিউইয়র্কেও গিয়েছেন। সেখানে চাকরিও পেয়েছিলেন ইলমা।

বিলাসবহুল আর আরামদায়ক জীবনের হাতছানি ছেড়ে ২৩ বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন ইলমা। দেশে ফেরার ব্যাপারে তার যুক্তি ছিল, যা করবেন দেশে থেকে দেশের জন্য করবেন। 

ইলমা ঠিক করেন ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নেবেন। ২০১৭ সালে ইউপিএসসিতে উত্তীর্ণ হন। ভারতে  ২১৭তম হয়েছিলেন ইলমা। পরে তাকে যখন পছন্দের বিভাগ বেছে নিতে বলা হয়, তখন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসকেই বেছে নেন তিনি। ২০১৮ সালে আইপিএস অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।

ইলমার গল্পটা সেখানেই থেমে যেতে পারত। কিন্তু আইপিএস অফিসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছোটদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চালান ইলমা। ‘হোপ’ নামে সেই সংস্থার কাজ ছোটদের স্বপ্নপূরণে সাহায্য করা। কারণ ইলমা জানেন পরিশ্রম আর সদিচ্ছা থাকলে কোনো স্বপ্নই অপূর্ণ থাকে না।

আগামীনিউজ/শরিফ