বছরে ১০ লাখ প্রাণ ঝরে আত্মহত্যায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০১:৫১ পিএম
প্রতীকী ছবি

ঢাকাঃ বিশ্বজুড়ে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছেন। বাংলাদেশে এ হার ১১ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার।

তবে আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯০ শতাংশের বেশি আত্মহত্যার পেছনে কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা দায়ী। তাই যথাসময়ে এসব সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব।

৪০ পেরোনো এক ব্যক্তি শোনাচ্ছিলেন, জীবনের এক অস্থির পর্ব পেছনে ফেলে আবারও ছন্দে ফেরার গল্প।
 
এক দশক আগের কথা। মনে হয়েছিল, পরিবারের কাছে অবহেলার শিকার। জেঁকে বসে হতাশা-বিষণ্ণতা। বেঁচে থাকার কোনো তাড়নাই আর কাজ না করায়, আত্মহননের চেষ্টা করেন কমপক্ষে তিনবার।
 
জীবনের সেই বিধ্বস্ত সময়ের একপর্যায়ে পাশে পান একজন স্বজনকে। যার মানসিক শক্তির জোগান, ধীরে ধীরে বদলে দেয় দৃষ্টিভঙ্গি। ফিরে পান বেঁচে থাকার জ্বালানি, জীবনের প্রতি মায়া। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন বেশ ভালোই আছেন বলে জানালেন তিনি। উপলব্ধি, জীবন বড় সুন্দর, জীবনের চেয়ে বড় কিছু নয়।
 
তিনি বলেন, আমি এখন ভালো বোধ করি। মানুষের কাছে আমার কদর বেড়েছে। মনে হয় যে আমি যদি মরে যেতাম তাহলে আর এই জায়গাগুলো হতো না।
 
কিন্তু সবার গল্পটা এই ব্যক্তির মতো নয়। নিজের প্রতি উদাসীন অনেকেরই ফেরা হয়ে ওঠে না জীবন-ছন্দে।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যা করছেন একজন। ধারণা করা হয়ে থাকে, বিশ্বজুড়ে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন নিজের হাতেই। বাংলাদেশের চিত্রও আশঙ্কাজনক।

বেসরকারি এক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে দেশে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন আত্মহননে প্রাণ যাচ্ছে ৩৯ জনের। করোনার এই সময়ে আগের বছরের তুলনায় আত্মহত্যা বাড়ে ৪৪ শতাংশ।
 
বর্তমানে বিশ্বজুড়েই উদ্বেগের কারণ আত্মহত্যা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলেই সম্ভব আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা। আর সেক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতা পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকার পাশাপাশি উদ্যোগী হতে হবে রাষ্ট্রকেও।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯০ শতাংশের বেশি আত্মহত্যার পেছনেই কাজ করে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা। তবে সঠিক সময়ে এসব চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় যত্ন আর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে সম্ভব আত্মহত্যা ঠেকানো। একই সঙ্গে শিশুকাল থেকেই ব্যক্তিত্বের বিকাশ আর মানসিক শক্তি বাড়াতে অভিভাবকদের হতে হবে সচেতন।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, যাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আসে তার কিন্তু বেশির ভাগ মানসিক রোগের কারণে করে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই বিষয়টা যদি সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে তখন মানসিক রোগ যদি থাকে সেটা সঠিক চিকিৎসা হবে।
 
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা যে স্কিলগুলো এটা তৈরি হয় আসলে আমাদের ছোটবেলায় কোন পরিবেশে বড় হচ্ছি। এটা কিন্তু পরিবারের একটা নিয়ম। আপনার মধ্যে লাইফস্কিল ম্যানেজমেন্ট খুব বেশি ভালো। আপনার জীবনে যতই ঝামেলা হোক তাও কিন্তু আপনার মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসবে না।
 
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের পরিচর্যায় উন্নত অনেক দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেও বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে মানসিকভাবে বিপন্ন ব্যক্তিদের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ আরও বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
 
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে হটলাইনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যে কারও এমন সমস্যা হলে সে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে সে সাহায্য পেতে পারে।
 
পারিবারিক বন্ধন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, সামাজিক সম্পর্ক জোরদার আত্মহত্যা প্রতিরোধের বড় হাতিয়ার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।