ইয়েমেনে সৌদির ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা

এপ্রিল ৫, ২০২১, ০৯:৪৩ পিএম
ছবিঃ সংগ্রহীত

ঢাকাঃ সৌদি জোট হুথিদের পরাজিত করা এবং ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার যে লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল; সেটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় লন্ডনভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক থমাস ও ফক এক মতামতধর্মী সংবাদে এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ইয়েমেনে হুথিদের বিদ্রোহীদের উৎখাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক হস্তক্ষেপ শুধুমাত্র ব্যর্থই হয়নি, বরং সৌদিজোট এমন এক অবস্থায় আছে যে; তারা আত্মসমর্পনে বাধ্য হতে পারে।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। শুরুতে সৌদি আরব পূর্বাভাস দিয়েছিল, এ যুদ্ধ মাত্র কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হবে। তবে আজ ছয় বছর হয়ে গেল, এ যুদ্ধ শেষের কোনো লক্ষণ নেই।

ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্টাডিজের পরিচালক নাদের হাসেমী বলেন, ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহী নিজেদেরকে অজেয় শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছে। যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য সৌদি আরবের বিরোধী পক্ষের সমান সক্ষমতা নেই। ২০১৫ সালে অপারেশন ডিসাইসিভ স্ট্রম দিয়ে সৌদি আরব যে অভিযান শুরু করেছিল; বাস্তবতা এখন তার থেকে ভিন্ন।

নাদের হাসেমী বলেন, সৌদি আরব ভেবেছিল কয়েক সপ্তাহ বোমা বিস্ফোরণ করে তারা যুদ্ধে জিততে পারবে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাত বছরেও যুদ্ধ সমাপ্তের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বাস্তাবিক অর্থে হুথিরা পূর্বের থেকে অধিক অগ্রসর হয়েছে। আর সৌদি আরব এমন এক অবস্থানে আছে যেখানে তারা জয়ী হবে; সেটা ভাবা বোকামি। হুথিরা রাজধানী সানা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও দেশটির উত্তর-পশ্চিমের অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে। এছাড়া তেল,গ্যাস উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিবেও আক্রমণ পরিচালনা করছে। আঞ্চলিক অর্জনের পাশাপাশি হুথিরা বারবার দেখিয়েছে যে, তারা সৌদি আরবের ভেতরের স্থাপনায়ও হামলা করতে পারে।

সাংবাদিক থমাস ও ফক লেখেন, যুদ্ধে এমন এক পর্যায়ে আছে যেখানে সৌদি আরব হুথিদেরকে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে। সৌদি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য এই প্রস্তুাব দিয়েছে এমন নয়, বরং যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফেরার কৌশল হিসেবে এই প্রস্তাব দিয়েছেন।

কেন শুরু হয়েছিল এই যুদ্ধ?

আরব বসন্তের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন ইয়েমেনের ৩৩ বছরের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ। ২০১১ সালে তিনি তার ডেপুটি মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর সানায় হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধে ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর স্বৈরশাসক আলি আবদুল্লাহ সালেহ মারা যান।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মানসুর হাদিকে চারপাশ থেকে নানা সংকট চেপে ধরে। জিহাদিদের হামলা, দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন, সেনাবাহিনীতে সালেহর অনুগত বাহিনী, দুর্নীতি, বেকারত্ব, খাদ্যসংকট। সালেহর শাসনামলে ইয়েমেনের সংখ্যালঘু জাইদি শিয়া সম্প্রদায়ের হুতি বাহিনী কয়েক দশক ধরে একাধিকবার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, লড়াই করেছিল। নতুন প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে হুতি বাহিনী এবং উত্তরের সাদা প্রদেশসহ আশপাশের এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সরকারের ব্যর্থতায় বিরক্ত সাধারণ সুন্নিরা ২০১৪ সালের শেষে এবং ২০১৫ সালের শুরুতে হুতিদের প্রতি সমর্থন দেখায়। বিদ্রোহীরা ওই সময় সানাও দখলে নেয়।

সেনাবাহিনীর সালেহ অনুগত সেনারা হুতিদের সঙ্গে একজোট বেঁধে ক্ষমতা দখলে পুরো দেশ দখলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। চাপের মুখে মানসুর হাদি ২০১৫ সালের মার্চে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

হুতি বাহিনীর এই শক্তিশালী হওয়ার পেছনে ওই অঞ্চলের শিয়া শক্তি ইরান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলা হয়। ফলে পাল্টা হামলার জন্য জোটবদ্ধ হয় আরব বিশ্বের সুন্নি দেশগুলো। সৌদি আরবের নেতৃত্বে আটটি আরব দেশ (বেশির ভাগই সুন্নি) হাদি সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে শক্তি প্রয়োগ শুরু করে।

আগামীনিউজ/প্রভাত