ঢাকাঃ আজ আনুষ্ঠানিক শপথ নেবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের হামলার আশঙ্কা থেকে এ আয়োজনকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে ওয়াশিংটনসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে।যদিও করোনা মহামারীর কারণে আয়োজন থাকছে সীমিত।
হোয়াইট হাউজের পরিবেশ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া ৭৮ বছর বয়সী বাইডেনের জন্য একেবারে নতুন নয়।দেশটির ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৯-২০১৭ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে যুক্ত ছিলেন তিনি।টানা কয়েক দশক ধরে নিজ শহর উইলমিংটন থেকে ট্রেনে চেপে রাজধানী ওয়াশিংটনেএসে দায়িত্ব সামলেছেন বাইডেন।ঐতিহ্য ধরে রাখতে ট্রেনে চড়ে এসে শপথ নিতে চেয়েছিলেন তিনি।নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাইডেনের সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।তবে ঐতিহ্য মেনে ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম প্রান্তে খোলা আকাশের নিচেই শপথ নেবেন তিনি।বাইডেনের শপথ ঘিরে যেকোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও হামলা এড়াতে ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড। পার্লামেন্ট ভবন, হোয়াইট হাউজসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সরকারি দপ্তরগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখা হয়েছে।বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওয়াশিংটন অভিমুখী প্রধান সড়ক ও সেতুগুলোর প্রবেশমুখ, চলছে তল্লাশি। নতুন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত রয়েছে হোয়াইট হাউজ।
করোনার বিরুদ্ধে চরম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।এ কারণে শপথ অনুষ্ঠান হবে সীমিত।উপস্থিত থাকবেন মাত্র কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথি।সংক্রমণ এড়াতে সমর্থকদের ওয়াশিংটনে আসতে নিরুৎসাহিত করেছেন বাইডেন।অনলাইনে এ আয়োজনে যুক্ত হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডিরা উপস্থিত থাকেন।ঐতিহ্য মেনে বাইডেনের শপথে বারাক ও মিশেল ওবামা, বিল ও হিলারি ক্লিনটন দম্পতিউপস্থিত থাকছেন। তবে থাকছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।শপথ শুরুর আগেই ওয়াশিংটন ছেড়ে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো গলফ রিসোর্টে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।তবে এ আয়োজনে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন।
ট্রাম্প এখনো নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানাননি। তবে মেলানিয়া ট্রাম্প এরই মধ্যে বিদায়ী বার্তা দিয়েছেন। টুইটারে পোস্ট করা ভিডিও বার্তায় মেলানিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবের অংশ।দেশজুড়ে আমেরিকানদের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ডে আমি বেশ অনুপ্রাণিত বোধ করি।আপনারা যা-ই করুন না কেন সেটা মন দিয়ে করুন।মনে রাখবেন, সহিংসতার মাধ্যমে কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়।এটা কখনই ন্যায়সংগত নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ক্ষমতা গ্রহণের পর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বাইডেনকে।একদিকে করোনা মহামারীর রাশ টানা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ঝক্কি সামলানো তার সামনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে।করোনাকালে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এরই মধ্যে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন।ক্ষমতা নিয়েই ডজনখানেক পরিবর্তনমূলক নির্বাহী আদেশ জারি করবেন বাইডেন।এর মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা অন্যতম।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এরই মধ্যে নিজ প্রশাসনের রূপরেখা দিয়েছেন বাইডেন।পাশে থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্টকমলা হ্যারিস, নারী, কৃষ্ণাঙ্গ, অভিবাসীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশাসন সাজিয়েছেন বাইডেন। এতে জায়গা পেয়েছেন ১২ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত।হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাইন সিদ্দিক।
আগামীনিউজ/সোহেল