মার্কিন নির্বাচন: জালিয়াতির ৫ অভিযোগ কতটা সঠিক?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ২২, ২০২০, ০৫:১৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার নির্বাচনী টিম এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এর বিরুদ্ধে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু তারা যেসব জালিয়াতির অভিযোগ তুলছেন, তার পক্ষে কি প্রমাণ আছে?

গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জিউলিয়ানি জালিয়াতির অনেক অভিযোগ তুলে ধরেন।

অভিযোগ ১: ডেমোক্র্যাটদের ব্যাখ্যাহীন ভোটের জোয়ার

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অন্যান্যরা বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলেছেন যে, ভোট গণনার সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের পক্ষে হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যায় ভোট আসতে শুরু করে।

১৯শে নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন রুডি জিউলিয়ানি একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ডেট্রয়েটের এক ভোট গণনা কেন্দ্রে একদিন সকালে হাজার হাজার অতিরিক্ত ব্যালট এসে হাজির হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জিউলিয়ানি। তিনিই নির্বাচনী ফল চ্যালেঞ্জ করে আইনি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন

একজন ভোট কর্মীর দাবির ভিত্তিতে মিস্টার জিউলিয়ানি এই অভিযোগটি তোলেন। ঐ ভোট কর্মী দাবি করেছিলেন, তিনি সেখানে দুটি ভ্যান আসতে দেখেন, যেগুলোতে করে খাবার আনার কথা ছিল।

কিন্তু এই দুটি ভ্যান থেকে তিনি ''কোন খাবার নামাতে দেখেননি‌। অথচ কাকতালীয়-ভাবে তখন খবর প্রচারিত হয় যে মিশিগানে আরও এক লাখ বেশি ব্যালট খুঁজে পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ভ্যানটি সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর দুঘণ্টা তখনো পার হয়নি।"

কিন্তু এই অভিযোগটি সহ অন্য আরও কিছু অভিযোগ ১৩ই নভেম্বর একজন বিচারক তার রায়ে বাতিল করে দেন এই বলে যে, এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়।

রিপাবলিকানদের তরফ থেকে এরকম আরও অভিযোগ তোলা হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজ্যে, যেখানে দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। রিপাবলিকানরা অভিযোগ করছিল, এসব রাজ্যে হঠাৎ করে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোটের জোয়ার দেখা গেছে। নির্বাচনে জালিয়াতি হয়ে থাকতে পারে এরকম একটা পরোক্ষ ইঙ্গিত ছিল এসব অভিযোগে।

কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এজন্যে দায়ী ছিল আসলে কাগজপত্রের ভুল বা সফটওয়্যারের ত্রুটি, যা ধরা পড়ার পর সংশোধন করা হয়েছিল।

এখানে আরও একটি বিষয় বলা দরকার। এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। আর এদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকেই ভোট দিয়েছেন।

এসব ভোট গণনায় সময় লেগেছে অনেক বেশি। আর এই গণনার ফল নির্বাচনের পরদিন এক-জায়গায় করার পর প্রকাশ করা হচ্ছিল ধাপে ধাপে। ফলে হঠাৎ করেই জো বাইডেনের পক্ষে ভোট হঠাৎ উর্ধ্বমুখী হয়েছিল।

আর এটা সত্যি নয় যে এসব অতিরিক্ত ভোটের সবই মিস্টার বাইডেন পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও অনেক ভোট ছিল।

অভিযোগ ২: ভোট গণনার সময় সেখানে যেতে দেয়া হয়নি
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার আইনজীবীদের দল অন্য যে অভিযোগটি তুলেছিলেন, সেটি হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া এবং ডেট্রয়েটের মতো কিছু ডেমোক্র্যাট শাসিত নগরীতে ভোট গণনার স্থানে রিপাবলিকান ভোট পর্যবেক্ষকদের প্রবেশাধিকার ছিল না।

ভোট কেন্দ্রে ব্যালট গণনার সময় সেখানে ভোট পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে দেয়া হয়, যাতে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।

বেশিরভাগ রাজ্যেই পর্যবেক্ষকদের এই সুযোগ দেয়া হয়, যদি কিনা তারা নির্বাচনের আগের দিন তারা নিবন্ধন করেন। আর ভোট পর্যবেক্ষকরা সাধারণত কোন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

কিন্তু ডেট্রয়েট এবং ফিলাডেলফিয়াতে দুটি দলের পর্যবেক্ষকদেরই ভোট গণনা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

ডেট্রয়েটে, ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান- এই দুটি দলের ১৩০ জনের বেশি পর্যবেক্ষককে ভোট গণনার স্থানে যেতে দেয়া হয়েছিল।

পেনসিলভানিয়ায় এই অভিযোগটি রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৭ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, পোস্টাল ভোট গণনার সময় পর্যবেক্ষকরা কতটা কাছাকাছি গিয়ে তা দেখতে পারবেন, সেটার সীমা বেঁধে দিয়ে পেনসিলভানিয়া রাজ্যের কর্মকর্তারা কোন আইন ভঙ্গ করেননি।

আগামীনিউজ/প্রভাত