ইউরোপের করোনা লড়াই

নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২, ২০২০, ০৩:১৯ পিএম
ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ মহাদেশ। প্রথমদিকে কভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে ইউরোপের লড়াইয়ের ফ্রন্টলাইনে মূলত হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের করতে হয়েছে। কিন্তু দেশগুলো যখন ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঝড় এড়াতে চাইছে, তখনই হাসপাতালের কাজটি রাস্তায় সরে গেছে। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের পরিবর্তে পুলিশ বাহিনীকে এটা পরিচালনা করতে হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ রেকর্ড সংক্রমণের হার দেখেছিল। মার্চ থেকে জুন মাসে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের মতো দেশগুলোতে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা এত দেখা যায়নি।

গ্রিস ও ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলো সংক্রমণের প্রথম ঝড়ে প্রবলভাবে আক্রান্তের পর আগস্টে দেশগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। জুনে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ সীমানা পুনরায় খোলার সুযোগ নিয়ে গ্রীষ্মের ছুটিতে সৈকতে যাত্রা করছে পর্যটকরা।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড় এড়াতে কর্তৃপক্ষ দৃঢ় সংকল্পবন্ধ হয়ে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। ইতালি ও গ্রিসে নাইট ক্লাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, স্পেন, ইতালি ও গ্রিসে কারফিউ চালু করা হয়েছে এবং বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 
নিয়মগুলোও ধীরে ধীরে কঠোর করা হবে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরপূর্বক মানতে বাধ্য করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি ইউরোপে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াই হয়ে উঠেছে।

 পর্যটকদের হটস্পট ফ্রান্সের মার্সেইয়ে মঙ্গলবার বাড়ির বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এটা বাধ্য করতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সেখানে জাতীয় পুলিশের একটি বিশেষ দল পাঠানো হয়েছে। 

ফ্রান্সে বাড়ির বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার দুই সপ্তাহ পর এরই মধ্যে একটি অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী নিয়ম ভাঙার অপরাধে ৭০০ মানুষকে জরিমানা করেছে, যারা গত কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ ও বিক্ষোভ মোকাবেলা করে আসছে। 

ইউএনএসএ পুলিশ ইউনিয়নের আঞ্চলিক সেক্রেটারি এরিক মেলিন বলেছেন, আমাদের শরীরে আগে হলুদ ভেস্ট ছিল এবং এখন কভিড-১৯ রয়েছে। এ মিশনগুলোতে ব্যস্ত থাকাকালে আমরা অন্য অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি না। যদিও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের সাধারণ ভূমিকা।

তবে নতুন বিধিগুলো জনসাধারণের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কারণ আপনি হয়তো এমন এলাকা থেকে যাচ্ছেন, যেখানে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে না এবং আপনি এমন এলাকায় প্রবেশ করছেন যেখানে এটি বাধ্যতামূলক। এগুলো জানা আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। 

আবার স্থানভেদে নতুন আইন প্রয়োগেও বিভিন্নতা রয়েছে। বেশির ভাগ দেশে অতিরিক্ত রিসোর্স বা পাল্টে দেয়া পুলিশ কৌশলগুলোর বিষয়ে খুব কমই জানানো হয়েছে। সামগ্রিকভাবে নতুন বিধিগুলো কার্যকর করার বিষয়টি সাধারণ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাঁধে এসে পড়েছে।

ইউরোপীয়দের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান পুশব্যাকের আশঙ্কা পুলিশকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে পারে।গত মঙ্গলবার ( ১ আগস্ট ) জার্মানিতে ২০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছিল এবং তারা চেঁচিয়ে বলেছিল, আমরা দ্বিতীয় ঝড়। 
আবার শনিবার ডাকা নতুন করে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে কেউ রাস্তায় নামলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে।

নতুন নিয়মগুলো ক্রমবর্ধমান কভিডের পরিসংখ্যানগুলো হ্রাস করতে সহায়তা করবে কিনা তা শিগগিরই জানা যাবে। তবে ইউরোপজুড়ে কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে। আর পুলিশ এই দুই দলের মধ্যে সূক্ষ্ম সীমানা বজায় রেখে চলেছে। সিএনএন অবলম্বনে।

আগামীনিউজ/জেহিন