বছরের পর বছর ধরে চীনের জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত লাখ লাখ মুসলমান ‘সংখ্যালঘু’ ভেবে নির্যাতন করছে বেইজিং। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো কথা না বললেও মুসলমান দেশগুলো নীরব থেকেছে। একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক মন্তব্য করেছেন, মুসলমান দেশগুলো শুধু নিজেদের স্বার্থেই ‘মুসলিম ঐক্যের’ ধারণাটি ব্যবহার করে। তারা চীনা নির্যাতিত মানুষের জন্য কোনো কথা বলে না।
সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি কলামে এ মন্তব্য করেন সাংবাদিক কোহেন। তিনি বলেছেন, মুসলমানদের নীরবে নিপীড়িত হওয়ার প্রধান কারণ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ যে দেশগুলো রুশদি, জিল্যান্ডস পোস্টেন এবং চার্লি হেবদোর বিরুদ্ধে ক্রোধে ফেটে পড়েছে, সেগুলো এখন নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ‘মুসলিম ঐক্যের’ ধারণাটি তখনই ব্যবহার করে, যখন নিজেদের স্বার্থে দরকার হয়।
তিনি লেখেন, জিনজিয়াংয়ে ‘স্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক’ দল পাঠানোর অনুমতি দিতে চীনকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, আলজেরিয়া এবং অন্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো, যারা নিজেদের ইসলামের রক্ষক হিসেবে দাবি করে, তারাই এ পশ্চিমা সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তা রুখে দিয়েছিল।
সেই লেখায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইরান মাঝে মধ্যে সমালোচনা করলেও ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা চীনের সহায়তা চায় বলে খুব সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের অভিযোগ জানায়। তাদের কপটতা অনেকটাই হাস্যকর। ইরান, সিরিয়া এবং আরও অন্য কয়েক ডজন দেশ একটি যাদুবাস্তব উপন্যাস সহ্য করতে পারেনি, অথচ গণহারে মুসলমান নারীদের বন্ধ্যা করে দেওয়ার বিষয়টি তারা মেনে নিয়েছে। বন্দিশিবিরের প্রতি তাদের চাপা সমর্থন আছে কিন্তু একটি ড্যানিশ পত্রিকার কার্টুনে কী ছাপা হবে তার সীমা তারা ঠিক করে দিচ্ছে।
জাতিসংঘে চীনের কণ্ঠ এখন আরও সক্রিয় এবং প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে কারণ অসংখ্য দেশ চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ অবকাঠামোগত প্রকল্পের কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে লাভবান হচ্ছে। বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ’
চীনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, চীনা বিশ্ব পাবলিসিটি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাওয়া নিপীড়কদের পছন্দ। আমরা আমাদের জনগণের সঙ্গে কী করি, তা নিয়ে তোমরা কিছু বলবে না এবং তাহলে তোমরা তোমাদের দেশের মানুষের সঙ্গে কী করো, তা নিয়ে আমরাও কিছু বলবো না।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়ানোর রেকর্ড এবং মুসলমান সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনাই শুনতে চায় না চীন। অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে যাদের সবচেয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর কথা, তারা মাথা নিচু করে নীরবতা পালন করছে।
আগামীনিউজ/ইমরান /জেএফএস