অবুঝ সন্তান তার মাকে প্রশ্ন করছে কবে আবার সব আগের মতো হবে? মা জবাবে জানান, ‘তোমার মা দৈত্যদের সঙ্গে লড়াই করছে। তারা মারা গেলেই আবারো মা ফিরে আসবে। যুদ্ধ জয় করেই তোমার কাছে ফিরে যাবো।’ একথা বলার পরই অঝোরে কাঁদছেন মা-মেয়ে। দূর থেকে আলিঙ্গনের ভঙ্গিমায় হাত বাড়ান মা। মেয়েও তাঁকে দেখে তাই করে। এরপর পুডিং রেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায় মেয়ে। চোখের জল মুছতে মুছতে খাবারের কৌটো হাতে তুলে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যান নার্স মা। এমন একটি দৃশ্য দেখা যায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে।
মা নার্স। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন তিনি। ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে দেখা করার সময়ও পাচ্ছেন না। হাসপাতালের চার দেওয়ালেই দিন কাটছে তাঁর। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটিতো আর বোঝে না ভাইরাসের ভয়াবহতা। তাইতো মাকে ছাড়া এক সেকেন্ডও কাটছে না তার। দূর থেকে হাসপাতালে মাকে দেখে আসা ছাড়া, আর কোনও উপায় নেই শিশুর। সংক্রমণের আশঙ্কাই তাই দূর থেকে মেয়েকে আলিঙ্গন করেছেন মা। আবেগঘন মুহূর্তের ভিডিওই এখন নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। মা-মেয়ের এই দূরত্ব চোখে জল এনেছে নেটিজেনদের।
করোনা আতঙ্কে কাঁপছে চিন। সংস্পর্শেও মারণ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা প্রবল। তা সত্ত্বেও দায়িত্ব থেকে পিছু হটার কথা ভাবতেও পারেননা চিনের এক মহিলা নার্স। কারণ, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই যে তাঁর ব্রত অসুস্থকে সুস্থ করে তোলা। তাই আতঙ্ককে দূরে সরিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সেবায় ব্রতী তিনি। দিনরাতের অধিকাংশ সময় যে কীভাবে কেটে যাচ্ছে, তা বুঝতেই পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে তাঁর। ভাইরাস যদি আবার মেয়ের শরীরে বাসা বাঁধে, এই আতঙ্কে সন্তানের কাছেও যাচ্ছেন না। হাজারও ব্যস্ততার মাঝে মেয়েকে কাছে না টেনে থাকতে পারতেন না যে মা, সেই আজ হাসপাতালের চার দেওয়ালে বন্দি।
এদিকে, মাকে কাছে না পেয়ে দুঃখে দিন কাটছে ছোট্ট শিশুটির। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনও বোধ তৈরি হয়নি শিশুর। তাই মাকে কাছে না পেয়ে থাকতে পারছে না সে। কয়েক মিনিটের জন্য দূর থেকে মাকে দেখেই দিন কাটছে। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় রোজ কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে যায় শিশুটি। পুডিং কিংবা চকলেট সঙ্গে থাকেই। মেয়ে চলে যাওয়ার পর তার দেওয়া চকলেট বা পুডিং সস্নেহে তুলে নেন নার্স মা।
আগামীনিউজ/সবুজ