বিশ্ব কাঁপছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে। চীনে এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণে নিহতের সংখ্যা ২১৩ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা। হাজারো মানুষ আক্রান্ত করোনা সংক্রমণে। এরই মাঝে শুরু হয়েছে নতুন লড়াই। বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তবে এর মধ্যেই ভয়ংকর করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে প্রতিষেধক নির্ণয়ে বিজ্ঞানীরা নেমে পড়েছেন। চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের গবেষণাগারে চলছে সেই কাজ। আশার খবর, করোনাভাইরাস প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে।
বিবিসি জানাচ্ছে, চীন সরকার খুব দ্রুত এই ভাইরাসের জেনেটিক কোড জানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বিজ্ঞানীরা সহজে একটি ধারণা তৈরি করতে পারেন যে এই ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে, ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটির প্রকোপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এই ভাইরাস থেকে মানুষকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এই জেনেটিক কোড জানার পরই শুরু হয়েছে অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াই করার পরবর্তী কর্মসূচি। বিবিসি রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোর ইনোভিয়াস ল্যাবরেটরিতে সম্ভাব্য প্রতিষেধক তৈরির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষাকৃত নতুন ধরনের ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এই প্রতিষেধকটিকে এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে ‘আইএনও-৪৮০০’, যেটি এই গ্রীষ্মে মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই গবেষণা কেন্দ্রের বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেট ব্রোডেরিক জানিয়েছেন, চীন এই ভাইরাসের ডিএনএ সিকোয়েন্স জানানোর পর আমরা ল্যাবের কম্পিউটারে প্রবেশ করাই এবং তিন ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রতিষেধক ডিজাইন করি। এই প্রতিষেধক ভাইরাসের ডিএনএ সিকোয়েন্স ব্যবহার করে মানবদেহে থাকা ভাইরাসের বিশেষ কিছু অংশে আঘাত করে। আমাদের বিশ্বাস দেহ তখন ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ইবোলা, জিকা, মার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। প্রতিক্ষেত্রে প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে। তাতে থেমেছে ভাইরাসের আক্রমণ। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষেধক বের করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তাতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে তার জেনেটিক কোড দ্রুত নির্ণয় করেছে চীন। তার পরেই প্রতিষেধক তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েছে।
বিবিসি জানাচ্ছে, আগের সব ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলোর সঙ্গে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে সেসব ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করতে বিজ্ঞানীদের কয়েক বছর লেগে গিয়েছিল। তবে এবার ভাইরাসটি চিহ্নিত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের গবেষণা শুরু হয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের দ্রুত উদ্যোগের ফলে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়েছে।
তবে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির প্রচেষ্টা বেশ দ্রুত চললেও এটি এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই ধরনের রোগের প্রতিষেধক সবচেয়ে কার্যকরভাবে চালানো সম্ভব হয় যখন রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেটা হলে মহামারির মুখোমুখি হতে হবে। ফলে বিজ্ঞানীরা সেটাও এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
আগামী নিউজ/এসএম/এনএনআর