বিদেশে অঢেল সম্পদ সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান- ফাইল ফটো

ঢাকাঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ পাচার করেছেন বলে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন তিনি এর প্রতিক্রিয়া জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়, 'রোববার ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের লোকদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি একটি ওপেন সিক্রেট। মন্ত্রীপরিষদের সাবেক এক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। যার মূল্য ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের এক শতাংশের সমতুল্য। এটি অনেক ঘটনার মধ্যে একটি। বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে?'

এর জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা এই রিপোর্টের বিষয়ে অবগত রয়েছি। বাংলাদেশ সরকারকে বলব, তাদের সব কর্মকর্তা যেনো দেশটির আইন এবং অর্থনৈতিক বিধি-বিধান মেনে চলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে।

গত রোববার সাইফুজ্জামানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্লুমবার্গ। যুক্তরাজ্যে কোম্পানি হাউসের করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করে ব্লুমবার্গ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় একটি প্রপার্টি ২০২২ সালে ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়। রিজেন্ট পার্ক থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই প্রপার্টির পাশেই বিখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অবস্থান। লন্ডনের সবচেয়ে দামি এলাকাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই প্রপার্টিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু সাদা রংয়ের বাড়ি। বাড়িগুলোতে যে জানালা আছে, এর বিস্তার মেঝে থেকে একেবারে ছাদ পর্যন্ত। সর্পিলাকৃতির সিঁড়িগুলো উঠে যায় উপরের কয়েক তলা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে আছে সিনেমা হল ও জিমনেশিয়াম। বর্তমানে এই বাড়ির বাজারমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ডের বেশি।

এই প্রপার্টির মালিক বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড (২ হাজার ৭০০ কোটি) মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটসে আবাসন—যেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম বাংলাদেশি কমিউনিটির আবাসস্থল এবং লিভারপুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় আড়াইশ প্রপার্টির তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্লুমবার্গ দেখেছে, যখন এই প্রপার্টিগুলো কেনা হয়, তখন যুক্তরাজ্যজুড়ে তীব্র আবাসন সংকট চলছিল এবং এর ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি নতুন বাড়ি। এই লেনদেনগুলো এমন এক সময়ে করা হয়েছিল, যখন রুশ ধনকুবেররা খুব সহজেই তাদের সম্পদ যুক্তরাজ্যে লুকিয়ে রাখতে পারছে— এমন সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ সরকার সম্পত্তির বিদেশি মালিকানায় আরও স্বচ্ছতা দেখাতে চাইছিল। ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের পর যা আরও জরুরি হয়ে ওঠে।

ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে সাইফুজ্জামানের অন্তত পাঁচটি প্রপার্টি খুঁজে পেয়েছে। মিউনিসিপ্যাল প্রপার্টির নথি অনুসারে, এসব সম্পত্তি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ছয় মিলিয়ন ডলারে কেনা হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে পুননির্বাচিত হলেও মন্ত্রিসভায় তার পদ হারান। তবে তিনি সংসদীয় জমি সংক্রান্ত কমিটির সভাপতির পদে আছেন।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রাক-নির্বাচনী ঘোষণায় সাইফুজ্জামান তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৮ দশমিক তিন মিলিয়ন টাকা (দুই দশমিক চার মিলিয়ন ডলার) এবং তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের মোট সম্পদের পরিমাণ নয় লাখ ৯৩ হাজার ডলার বলে জানান। তিনি বাংলাদেশে সম্পদের ঘোষণাপত্রে তার যুক্তরাজ্যের সম্পদের পরিমাণ দেখাননি। মন্ত্রী হিসেবে ২০২২-২৩ সালে তার বেতন প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড হিসাবে দেখানো হয়।

ব্লুমবার্গ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের সঙ্গে কথা বলছে। তিনি সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘বাংলাদেশে বসবাসরত অবস্থায় একজন ব্যক্তির বিদেশে সম্পদ অর্জনের কোনো বিধান নেই। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, আমরা ব্যক্তিদের এ ধরনের কিছু করার অনুমতি দিই না।’


এম/