ঢাকাঃ পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর কথা স্বীকার করেছে ইরান। দেশটি বলছে, পাকিস্তানে হামলার লক্ষ্য ছিল ‘ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’। ওই হামলায় দুই শিশু নিহত ও আরও তিনজন আহত হন।
এই ঘটনায় পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে এবং ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, পাকিস্তানে যে বিমান হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে তা একটি ‘ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে’ লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফাঁকে তিনি একথা বলেন।
আবদুল্লাহিয়ান আরও বলেন, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ পাকিস্তানের কোনও নাগরিককে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। তথাকথিত জইশ আল-আদল গোষ্ঠীটি একটি ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং ওই হামলায় তাদেরই টার্গেট করা হয়েছিল।’
আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে’ হামলাটি ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাস্ক শহরে সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ‘গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কিছু অংশে আশ্রয় নিয়েছে। এই বিষয়ে আমরা একাধিকবার পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করলেও ‘দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপস বা খেলার অনুমতি দেবে না’ তেহরান।
আল জাজিরা বলছে, জইশ আল-আদল (আর্মি অব জাস্টিস) একটি সুন্নি মুসলিম সশস্ত্র গোষ্ঠী। এর আগে তারা পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত এলাকায় ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।
এদিকে বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের বিমান হামলা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তেহরান থেকে নিজ রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
বুধবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত, যিনি বর্তমানে তেহরান সফর করছেন তিনি আপাতত আর ফিরে নাও আসতে পারেন।’
যদিও পাকিস্তান তার দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রকৃতি বা এর অবস্থান সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেয়নি। তবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান এই বেআইনি কাজের জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে।’
এছাড়া তেহরান আকাশসীমার অপ্রীতিকর লঙ্ঘন করায় দুই দেশের মাঝে চলমান অথবা পরিকল্পিত উচ্চ-পর্যায়ের সব ধরনের সফরও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুমতাজ জাহরা বালোচ।
এর আগে, মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটিতে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইরানের চালানো এই হামলায় পাকিস্তানে অন্তত দুই শিশু নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরান সীমান্তের কাছে পাঞ্জগুর জেলায় চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। পাঞ্জগুর প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ভূখণ্ডের প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) অভ্যন্তরে অবস্থিত কোহ-ই-সাবাজ গ্রামে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আক্রমণে একটি মসজিদ এবং তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় অল্পবয়সী দুই মেয়ে শিশু নিহত হয়েছে এবং পরিবারের আরও তিন সদস্য আহত হয়েছেন।
এমআইসি/