ঢাকাঃ ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান চলছে টানা প্রায় দুই বছর ধরে। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই দেশটিকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা করে আসছে মিত্ররা। তবে মার্কিন রিপাবলিকানরাসহ পশ্চিমা মিত্রদের অনেকে বেঁকে বসায় সম্প্রতি দেশটির সহায়তা তহবিলে টান পড়েছে।
আর এতেই বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সাহায্যের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিধা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সাহসী করছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অঘোষিত সফরে লিথুয়ানিয়া গিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, সাহায্যের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিধা রাশিয়াকে উৎসাহিত করছে।
বুধবার জেলেনস্কি লিথুয়ানিয়ান প্রেসিডেন্টকে বলেন, ইউক্রেনকে অবশ্যই তার আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে হবে এবং তার গোলাবারুদের সরবরাহ পুনরায় পূরণ করতে হবে কারণ ইউক্রেনে প্রায় দুই বছরের চলা এই যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নওসেদার সাথে আলোচনার পর জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি, রাশিয়াকে থামানো যেতে পারে, তাকে (দেশটিকে) প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কখনও কখনও, ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তার বিষয়ে অংশীদারদের সিদ্ধান্তহীনতা শুধুমাত্র রাশিয়ার সাহস এবং শক্তি আরও বাড়িয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) এই যুদ্ধ শেষ করবেন না যতক্ষণ না আমরা সবাই মিলে তাকে শেষ না করি। লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, মলদোভা হতে পারে (রাশিয়ার) পরবর্তী টার্গেট।’
ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট এসময় লিথুয়ানিয়াকে তার সামরিক সহায়তা ও শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানান।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নওসেদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানি এই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ কতটা ক্লান্তিকর, এবং আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউক্রেনের সম্পূর্ণ বিজয় অর্জনের বিষয়ে আগ্রহী।’
তিনি বলেন, তার দেশ আগামী মাসে কিয়েভে এম৫৭৭ সাঁজোয়া যান পাঠাবে। এটি পূর্বে ঘোষিত ২০০-মিলিয়ন-ইউরোর সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ।
এর আগে বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের লিথুয়ানিয়ায় পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, তিনি আগামী কয়েকদিনে লাটভিয়া এবং এস্তোনিয়াতেও যাবেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে তিনি বলেন, ‘এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া আমাদের নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং নীতিগত অংশীদার। আজ, আমি তালিন এবং রিগা যাওয়ার আগে ভিলনিয়াসে পৌঁছেছি।’
এখানে তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা, ইইউ ও ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হওয়া, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ও ড্রোন সম্পর্কিত সহযোগিতা এবং ইউরোপীয় সমর্থনের আরও সমন্বয়সহ সবই এজেন্ডায় রয়েছে।’
এদিকে এস্তোনিয়ায় প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাস ইউক্রেনের প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, এবং আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গাস সাহকনা বলেছেন, তালিন আগামী চার বছরে ‘তার জিডিপির ০.২৫ শতাংশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার জন্য বরাদ্দ করতে’ প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া এই নির্দয় আগ্রাসনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যে মূল্য দিতে হবে তার তুলনায় এখন ইউক্রেনকে সমর্থন করা অনেক সস্তা।’
এমআইসি/