তিন হাজার বছর আগের মমি কথা বলল!

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক জানুয়ারি ২৮, ২০২০, ০৩:২০ পিএম

মিসরের প্রাচীন শহর থিবসের কারনার এক মন্দিরের পুরোহিতের মৃতদেহ মমি করে রাখা হয়েছিল তিন হাজার বছর আগে। নেসিয়ামান নামের ওই পুরোহিতের মৃত্যু হয় ওই মন্দিরেই। এরপর মন্দিরেরই একটি কক্ষে তার দেহ মমি করে রাখা হয়েছিল।

মমি করে রাখা মিসরের ওই পুরোহিত কথা বলে উঠলেন! অবিশ্বাস্য এই ঘটনা ঘটেছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। ১৮২৩ সালে মমিটা উদ্ধার করে ইংল্যান্ডের লিডস সিটি মিউজিয়ামে রাখা হয়। এই মমি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা চালিয়েছেন। সে সময়ের মিসর সম্পর্কে অনেক তথ্য এই মমি থেকে মিলেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এবারই প্রথম কোনো মৃত ব্যক্তিকে দিয়ে কথা বলাতে সক্ষম হয়েছেন।

কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে, মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে কথা বলেছেন। বরং মমি করে রাখা ওই মৃত ব্যক্তি তিন হাজার বছর আগে মৃত্যুকালে শেষ যে কথা বলেছিলেন, সম্প্রতি তার কণ্ঠনালির ভেতর কৃত্রিম বাকযন্ত্র বসিয়ে তা শুনতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

মানুষের ল্যারিংসে শব্দ তৈরি হয়। আর ভোকাল ট্র্যাক প্যাসেজে সেই শব্দ ফিল্টার হয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করে। এই পুরো বিষয়টাকে একসঙ্গে মানুষের ভোকাল বক্স বলা হয়।

তিন হাজার বছর আগে নেসিয়ামান শেষ যে কথাটা বলেছিলেন, তা জানার জন্য প্রথমে বিজ্ঞানীরা তার ভোকাল ট্র্যাকের ডাইমেনশন থ্রিডি প্রিন্টারে কপি করেন। তবে এই পদ্ধতি তখনই সম্ভব, যদি মৃত ব্যক্তির ভোকাল ট্র্যাকের নরম কোষগুলো অক্ষত থাকে।

ওই মিসরীয় পুরোহিতের দেহ এত সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল যে, এত বছর পরও ভোকাল ট্র্যাকের কোষগুলো অক্ষত ছিল। ফলে থ্রিডি প্রিন্টারে ওই মমির ভোকাল ট্র্যাকের কপি করে ল্যারিংসে কৃত্রিমভাবে তার কণ্ঠস্বর তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে মমির সেই কৃত্রিম কণ্ঠস্বর থেকে শব্দ বের করা হয়।

গত বুধবার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, তিন হাজার বছর আগের মমিটিকে দিয়ে তারা কৃত্রিমভাবে কথা বলাতে পেরেছেন। রয়াল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক এবং লিডস মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। থ্রিডি প্রিন্টার বাকযন্ত্র বা ভোকাল বক্সের মাধ্যমে মমিকে কথা বলিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তিন হাজার বছর আগের ওই মমি ক্ষীণ কণ্ঠে ‘বেড’ ‘ব্যাড’ জাতীয় কিছু শব্দ উচ্চারণ করেছেন। এটাই ছিল তার শেষ শব্দ। তবে এর অর্থ কী তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি আরো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার শেষ বাক্য জানার চেষ্টাও চালানো হচ্ছে।

ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, শেষ জীবনে মুখে অ্যালার্জি দেখা দিয়েছিল ওই পুরোহিতের। অ্যালার্জির মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দাঁত, মাড়ি ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করেছিল। শেষ জীবনে তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারতেন না। মাত্র ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

আগামীনিউজ/হাসি/এনএনআর