ঢাকাঃ ঘর থেকে দুই পা ফেলতেই হরেক প্রতারণার বেড়াজাল। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। শুধু ডিজিটাল নয় অ্যানালগ প্রতারণায়ও মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। শুধু বাইরে নয়, ঘরেও থাকা যাচ্ছে না নিরাপদ। ডিজিটাল দুনিয়ার বড় অংশ জুড়েই প্রতারণার ফাঁদ। ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানামুখী অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে যা খুশি তা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগের শেষ নেই। নারী, শিশু ও সম্মানিত মানুষেরা অনলাইনে নানাভাবে হয়রানির শিকার। ডিজিটাল প্রতারণা নিয়ে অভিযোগের পাহাড় পুলিশ, র্যাবে।
কখনো সুপরিচিত কোনো নারীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ছবি নিয়ে ফেক আইডি খুলে তাতে আপলোড করা হচ্ছে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও। ফেসবুকে ই-কমার্স পেজ খুলে বিশাল মূল্যছাড়ের লোভ দেখিয়ে ক্রেতা থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্যই পাঠানো হচ্ছে না। আবার কখনো সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতিমান ব্যক্তি বা তারকাদের নিয়ে আপত্তিকর ও বানোয়াট ভিডিও বানিয়ে ছাড়া হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবে। পরে দাবি করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রই প্রতারণার অক্টোপাসে বন্দী হয়ে পড়ছে, পদে পদে ওত পেতে থাকছে নানামুখী বিপদ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা রকমের অন্তত ২০০ প্রতারক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের কাছে প্রতিদিন সহস্রাধিক লোক প্রতারণার শিকার হন। ডিএমপিভুক্ত থানাগুলোর লিপিবদ্ধ মামলা-জিডি ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতারণার খবরের সূত্র ধরে এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ‘প্রতারণাও’ ইদানীং ডিজিটাল রূপ পেতে শুরু করেছে। এখন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড যেমন জালিয়াতি করে অন্যের অ্যাকাউন্ট খালি করা হচ্ছে, তেমনি গলা কাটা পাসপোর্ট তৈরি, বিদেশি ভুয়া ওয়ার্কিং পারমিট ও নিয়োগপত্র প্রস্তুত করলেও সহজে তা জাল প্রমাণের উপায় থাকে না। জাল টাকার ছড়াছড়ি আছে বাজারজুড়ে। মোবাইল ফোনে লাখ লাখ টাকা লটারি পাওয়ার প্রলোভনযুক্ত মেসেজ বানিয়েও প্রতারণা করা হচ্ছে অহরহ। আছে বিকাশ প্রতারণা ভূরিভূরি। নানা কূটকৌশল-বুদ্ধির ফাঁদে শুধু যে গ্রামীণ এলাকার সহজ-সরল মানুষজনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, শহুরে শিক্ষিত সচেতন বাসিন্দারাও এসব প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে চলছেন অহরহ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে প্রতারণার নানা বেহালচিত্র। দেখা গেছে, খোদ রাজধানীতেই প্রতিনিয়ত চলছে কমবেশি ৭০ থেকে ৭৩ রকমের প্রতারণা। সন্তান প্রসব থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি, বিয়ে এমনকি মৃত্যুর পর লাশ দাফন সব ক্ষেত্রেই প্রতারণার একচ্ছত্র দাপট রয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছেন অনেকে।
প্রতারকরা নারীসম্পৃক্ত নানা অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার মওকা পাচ্ছেন। নানা প্রলোভনে নতুন কৌশলে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে দুধ্বর্ষ নারী অপরাধী চক্র। কখনো কখনো গায়ে পড়েই কারও সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি করছেন, ‘কু’ প্রস্তাব দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলেও পথেঘাটে বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তিকে জিম্মি করে টাকা আদায় করছেন এ চক্রের সদস্যরা। নারী অপরাধী সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে এবং নিয়মিত ব্ল্যাকমেলিং করে চাহিদামাফিক সবকিছু হাতিয়ে নেন। সম্মানী ব্যক্তিদের কাছে নারী সিন্ডিকেট সবচেয়ে ভয়ংকর আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাটকে, ফিল্মে অভিনয়ের জন্য অনেকেই মরিয়া। তরুণ-তরুণীদের এ রকম স্বপ্ন ও সাধকে পুঁজি করে অনেকেই প্রতারণার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। নাটক ও সিনেমার লাইনে টাকা ঢেলে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। লম্পটদের খপ্পরে পড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তরুণীরা। রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে তারা সর্বস্ব খুইয়ে দেন। কারও কারও পরিণতি হয় আরও ভয়াবহ। নিরুপায় হয়ে তাদের সোসাইটি গার্ল বা কলগার্লের জীবন বেছে নিতে হয়, কারও কারও জীবনে নেমে আসে আরও ভয়ংকর অন্ধকার। এমনকি জীবন হারানোর ঘটনাও ঘটে অহরহ।