ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের শিকার ৯২ শতাংশ নারী

তথ্য ও প্রযুক্তি ডেস্ক এপ্রিল ১৯, ২০২১, ০১:০৪ পিএম

ঢাকাঃ সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ৯২.২০ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর মাধ্যমে নিপীড়িতদের ৬৯.৪৮ শতাংশই আপনজনের দ্বারা নিগ্রহের শিকার। ৩৩.৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও অপরাধীর মধ্যে প্রেমঘটিত সম্পর্কের তথ্য উঠে এসেছে। আর ৩৫.৭১ শতাংশ ঘটনায় অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিষয়ে দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা না হলে এই সামাজিক ব্যাধি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল সকালে আয়োজিত ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ ইউনিটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। গবেষণা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন গতকাল রবিবার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টারের গবেষণা সেলের সদস্যরা। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো থেকে সংগৃহীত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৪টি অপরাধের ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সন্তানদের মধ্যে যথাযথ প্যারেন্টিং গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ-তরুণীদের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক যথাযথ যৌন শিক্ষা খুব প্রয়োজন। একই সঙ্গে ধর্মীয়-সামাজিক শিক্ষা ও সময়ের যথাযথ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত কাজ দিতে হবে।

প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই সামাজিক কারণে আপনজনদের তা বলে না। এটি উচিত নয়। অপরাধ প্রতিরোধে নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাইকে আওয়াজ তুলতে হবে, তাহলে অপরাধ কমবে।

সৈয়দ নাসিরুল্লাহ বলেন, আইন না জানার কারণে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। কারিগরি জ্ঞান যাদের রয়েছে তাদের অপরাধ করার প্রবণতা বেশি। সাধারণত মধ্যবয়সীরা এর মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, প্রতিটি থানায় সাইবার ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

তানজিম আল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সাইবার অপরাধ বিষয়ক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি দরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে ৯২.২০ শতাংশ ভুক্তভোগীই নারী। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ৫৬.৪৯ শতাংশ এবং ৩২.৪৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে)। আবার ১৮ থেকে ৩০ বছর এবং ১৮ বছরের নিচে পুরুষের তুলনায় নারী ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আর ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা বেশি।

সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভিডিও ও স্থিরচিত্র আকারে ধারণ করা কনটেন্ট যথাক্রমে ৫১.৯১ ও ৩৫.৫২ শতাংশ। এটা অন্যান্য মাধ্যমের বিবেচনায় তুলনামূলক বেশি। প্রতিবেদনে নিপীড়নের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, ৬৩.০৭ শতাংশ। পাশাপাশি কারণ হিসেবে রয়েছে প্রতিশোধমূলক প্রবৃত্তি ও অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা।

প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ : প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোর আদলে নারী ও শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, সচেতনতা তৈরিসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-গণমাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, যথাযথ প্রক্রিয়ায় যৌনশিক্ষা বৃদ্ধি, ধর্মীয় অনুশাসন ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে প্রশিক্ষিত জনবল বাড়ানো, ভুক্তভোগী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, অপরাধপ্রবণ বয়সসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা, পর্নোগ্রাফি ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধে দেশীয় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং সন্তানদের সাইবার অ্যাক্টিভিটির ওপর মা-বাবার নজরদারি।

আগামীনিউজ/জনী