সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রলোভন, সতর্ক থাকার উপায়

প্রযুক্তি ডেস্ক মার্চ ১৫, ২০২১, ০৪:৩২ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ ফেসবুকে নানা প্রলোভনের ফাঁদ পেতে রেখেছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। প্রতারকেরা উপহার, অর্থসহ নানা বিষয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যোগাযোগ করে। লোভনীয় বার্তা পাঠিয়ে বা ‘ফিশিং’করে বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ফেসবুকে বিভিন্ন লোভনীয় লিংক বা স্ক্যাম ছড়িয়ে শিকার ধরার চেষ্টা করা হয়। ফেসবুকে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া কয়েক ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ঠকাতে অনেক দিন ধরেই নানা রূপে এসব স্ক্যাম রয়ে গেছে। এখন আরও নতুন নতুনরূপে তা সামনে আসছে।

সম্প্রতি একটা প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উপহারের নামে অনেকেই মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ-এ একটা মেসেজ বা বার্তা পেয়েছেন।

তাদের মধ্যে উম্মে হাবিবা একজন। তিনি বলেন, তার কাছে একটা এসএমএস আসে। সেখানে একটা লিংক ছিল। লিংকটা ক্লিক করলে লেখা আসছে, নারী দিবস উপলক্ষে ১০০এর বেশি উপহার রয়েছে। তার মধ্যে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন আরো নানা কিছু।

তিনি আরো বলেন, সেখানে অনেকগুলো বক্স ছিল। তিনটা বক্সে ক্লিক করার অপশন ছিল। আমি দুইটা বক্সে ক্লিক করার পর খালি আসে। তখন আমি ভীষণ উত্তেজনা বোধ করছিলাম। তিন নম্বর বক্সে ক্লিক করার পর আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স পেয়েছি সেটা দেখিয়ে অভিনন্দন দেয়। এর পর লেখা আসে ঐ একই লিংক আরো ২০জনকে হোয়াটসঅ্যাপ করতে হবে কিংবা সেটা ৫টা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠাতে হবে।

তিনি জানান, আমি এতটাই প্রলুব্ধ হয়ে যাই যে হোয়াটসঅ্যাপে ২০জনকে লিংক-টা ফরোয়ার্ড করি। পরে আমার কাছে মেসেজ আসে তাদের পাঠানো একটা অ্যাপ ইন্সটল করতে হবে আমার মোবাইল থেকে এবং ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি বলছিলেন, অ্যাপটি তিনি ইন্সটল করেননি। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন এটা উপহারের প্রলোভনে কোন ফাঁদ কিনা।

অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এমন উপহারের প্রলোভন দেখিয়া নানা সময়ে মোবাইল, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেইলে বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদে বার্তা আসতে পারে। সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা এই সব বার্তা বা লিংক থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

কারা পাঠায় লিংকঃ

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন থার্ড পার্টি বা তৃতীয় একটা পক্ষ এই লিংক বা বার্তা পাঠিয়ে থাকে। যে ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের নামে লিংকগুলো আসে তারা এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত থাকে না। এই থার্ড পার্টি ঐসব নামকরা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, খ্যাতি ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে।

এ প্রসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলেন, এটা এক ধরণের স্ক্যাম বা প্রতারণা। একটা ফিশিং লিংক ব্যবহার করে তারা এই প্রতারণাটা করে। এতে করে একজনের ব্যক্তিগত তথ্য চলে যায় থার্ড পার্টির কাছে।

থার্ড পার্টির লাভ কী?

আপাতদৃষ্টিতে তাদের দুইটি লাভের দিক দেখা যায়। জেনিফার আলম বলছেন দুই ভাবে তারা লাভবান হতে পারেন।

১. যদি তারা কোন ব্যক্তিবিশেষ কে টার্গেট করে তাহলে তারা সরাসরি এই ফিশিং লিংক তাকে পাঠাবে বা তার আশেপাশের মানুষকে পাঠাবে যাতে করে টার্গেট করা ব্যক্তি পর্যন্ত এই লিংক বা বার্তাটা পৌঁছাতে পারে। এই ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহটা লক্ষ্য থাকে থার্ড পার্টির।

২. সর্বসাধারণের কাছে তারা এটা পাঠায়। এখানে কিছু মজার খেলা তারা সেট করে। যেমন একটা ধাপ পার করে আপনি পরের ধাপে যাবেন। সেখানে হয়ত দেখা যাবে আপনাকে বলবে আপনি একটা মোবাইল ফোন বা কোন ডিভাইস জিতেছেন। তবে ঐ ডিভাইসটির দাম এক লক্ষ টাকা। তবে তারা (থার্ড পার্টি) আপনাকে অর্ধেক দামে দিতে পারবে। এই সময়ে অনেকে প্রলোভনে পড়ে টাকা দিয়ে দিতে পারে। আর থার্ড পার্টি সেই টাকাটা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে।

সর্তক থাকতে হবে কীভাবে:

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন উপহারের প্রলোভন দেখিয়ে যেসব বার্তা বা ই-মেইল আসে সেসব থেকে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে বিশেষ করে যখন কোন নামী প্রতিষ্ঠানের নামে এসব লিংক আসে।

১. এই লিংক গুলোতে ক্লিক না করা

২. সোশ্যাল মিডিয়াতে ঐ প্রতিষ্ঠানের কোন ভেরিফাইড পেজ থাকলে সেখানে ঐ সংক্রান্ত কোন পোস্ট আছে কি না সেটা আগে দেখতে হবে।

৩. কোম্পানিটির হটলাইন থাকলে সেখানে ফোন করে জেনে নিতে হবে।

এদিকে সম্প্রতি উইমেনস ডে উপলক্ষে যে লিংকটা ভাইরাল হয়েছে, সেটা সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশকে অবহিত করা হলে পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহেল রানা জানিয়েছেন তিনি লিংকটি সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে পাঠিয়েছেন। তারা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছেন।

আগামীনিউজ/নাসির