ভার্চুয়াল জগৎ: তৈরি হচ্ছে সাইকো জেনারেশন

প্রভাত আহমেদ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১, ০৪:৫৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ ভার্চুয়াল জগত নিয়ে যতই বাদানুবাদ থাকুক না কেন, এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, যে এই জগতটা আমাদেরকে আমাদের কল্পনার চেয়েও দ্রুত গতিতে গ্রাস করছে। তাই, যত তাড়াতাড়ি এর ভালো, মন্দ, গতি, প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায় ততই ভালো। জেনে বুঝে একে আলিঙ্গন করলে হয়তো সমস্যা কিছুটা এড়ানো যাবে।

ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত হচ্ছে ধারালো ছুরির মতো। এটি কীভাবে এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে তা সবচেয়ে বড় বিষয়। ছুরি স্বভাবতই খারাপ কোনো জিনিস নয়, এটিকে ভালো বা মন্দ দুকাজেই ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইচ্ছাকৃতভাবে প্রবৃত্তির তাড়নায় এটিকে অপব্যবহার করতে পারে, আবার তা থেকে অনেক ভালো কিছুও অর্জন করতে পারে। 

পৃথিবীর তিন ভাগ মানুষের এক ভাগই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত। অভ্যস্ততার এই অবস্থা অনেক সময়ই পৌঁছে যাচ্ছে আসক্তির পর্যায়ে। আর এর একটা ব্যাপক প্রভাব পরছে সমাজে; আমাদের ব্যক্তি জীবনে। গবেষকরা এই ভার্চুয়াল আসক্তিকে বলছেন ‘ভার্চুয়াল ভাইরাস’। আসক্তির দিক থেকে একজন মাদকাসক্ত আর একজন অনলাইন আসক্ত ব্যক্তির মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

ডিজিটাল কোকেন

অনলাইন আসক্তিকে মনবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল কোকেন’। নতুন কোন নোটিফিকেশন, চ্যাট মেসেজ অথবা মেইলের জন্য একটু পর পরই অনলাইনে ঢু মারছেন এই কোকেনে আসক্ত ব্যক্তিরা। ফেসবুক যারা ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই বলেছেন একটু পর পর তাদের ফেসবুকে ঢুকে দেখতে ইচ্ছে করে নতুন কোন নোটিফিকেশন আসল কী না? আর একবার ঢুকলে কীভাবে যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায় তা যেন তারা টেরই পান না!

ব্রেইন স্ক্যান ফলাফলে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি আর অনলাইন আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক মিল দেখা যায়। তাদের মধ্যে মস্তিষ্কের একই রকমের ছবি দেখা গেছে। দুদলের মানুষেরই মস্তিষ্কের সামনের দিকের হোয়াইট ম্যাটারগুলো ক্ষয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখা যায় ব্রেইন স্ক্যানে।

মানুষের আবেগ, মনযোগ আর সিদ্ধান্তগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেইনের এই হোয়াইট ম্যাটার অংশ। আর তা ক্ষয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে এই ক্ষমতাগুলোই দিন দিন কমে যাচ্ছে। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার আমাদের আবেগকে ভারসাম্যহীন করতে পারে। নষ্ট করতে পারে আমাদের মনযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্যকে এবং তৈরী হচ্ছে সাইকো জেনারেশন।

মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামে এক ধরণের কেমিক্যাল নিঃসরণ ঘটে প্রতি মুহুর্তে। কিন্তু হঠাৎ যদি এমন কিছু ঘটে যা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো তখন আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় এই ডোপামিনের প্রবাহ এবং ভালোলাগাকে আরও বাড়াতে ব্রেইন তখন ঐ কারণটাকেই বাড়াতে বলে।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই ডোপামিন এবং ভাললাগার সাময়িক এই অনুভূতিকে ক্রমাগত বাড়াতে চাওয়া; এটার নামই আসক্তি।

মুঠোফোন এবং ইন্টারনেট আসক্তি নিয়ে ডা. শাহিন রহমান আগামী নিউজকে বলেন, সত্যিকারের মাদকাসক্তির সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আসক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।”

মনযোগের ক্ষমতা নষ্ট

কেউ কেউ মনে করেন কাজের মাঝে একটু পর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু দিলে দক্ষ মাল্টি টাস্কার হয়ে ওঠা যায়। ধারণাটি সম্পূর্ণরুপে ভুল। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশন আর মাল্টি টাস্কিং দুটি দুই জিনিস।

গবেষণায় দেখা গেছে, খুব বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে মানুষেরা, একাধিক কাজে দক্ষতা তাদের অন্যদের চেয়ে কম। বরং তাদের মনযোগ এত বেশি বিক্ষিপ্ত যে এর ফলে তাদের স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে অন্যদের চেয়ে দ্রুত।

ফ্যান্টম ভাইব্রেশন

মাঝে মাঝে আমাদের মনে হয় যে, আমাদের সাথে থাকা মুঠোফোনটি হয়তো বেজে উঠল। অথবা পকেটে থেকে ভাইব্রেশন দিল। কিন্তু মুঠোফোনটি হাতে নেওয়ার পর দেখা গেল আদতে কোন ফোন আসেনি। তবে এই রকম মনে হওয়াকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ফ্যান্টম ভাইব্রেশন। আর যারা এধরনের অনুভূতি অনুভব করেন তারা এই ফ্যান্টম ভাইব্রেশন অথবা ভৌতিক কল সিনড্রোমে আসক্ত।

গবেষকেরা এর কারণ হিসেবে বলছেন, অধিক সময়ে মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার মস্তিষ্কের ভেতরে যে হেলোসিনেশন তৈরি করেছে তাই এই ফ্যান্টম ভাইব্রেশন অনুভূতির কারণ।

একটা জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যত জন ছাত্রছাত্রীকে এই অনুভূতির কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তাদের ৯০ শতাংশেরই এই ফ্যান্টম ভাইব্রেশনের অভিজ্ঞতা হয়েছে।   

স্মার্টফোন আমাদের এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, একটু পর পর নিজের অজান্তেই মোবাইল হাতে তুলে নেই দেখার জন্য যে কেউ এসএমএস দিল বা মেইল করল কী না? বা সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন কিছু এল কী না?

আত্মকেন্দ্রিকতা

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তবতা যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই আমাদেরকে অসামাজিকই করে তুলছে।  অন্তত গবেষকদের ধারণা এমনই। আমাদেরকে করছে বিচ্ছিন্ন আর স্বার্থপর। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ যখন আরেকজন মানুষের সাথে কথা বলে তখন ৩০ থেকে ৪০ ভাগ নিজের বিষয়ে কথা বলে। কিন্তু একজন মানুষ যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে তখন ৮০ ভাগ সময়ই নিজের ব্যাপারে কথা বলে।

এ বিষয়ে মনবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান আগামী নিউজকে বলেন, “আমরা সবাই কম বেশি সেলফি তুলি। সামাজিক মেলবন্ধনে এর দরকারও আছে। কিন্তু তা যখন অসচেতন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে করা হয় তখন তা এক ধরনের মানসিক রোগ। এ ধরনের মাত্রাতিরিক্ত এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে সেলফি তোলার রোগের নাম হচ্ছে-স্যালিফাইটিস”।

আর এ ধরণের সেলফি তোলার প্রবণতা থাকা ব্যক্তিরা অন্যদের থেকে অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয় বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, “মূলত আমাদের মধ্যে অনেকেই আমরা আত্মপ্রেম বা আত্মতুষ্টিতে ভুগি। আমরা যেখানেই থাকি না কেন সেখানেই নিজেকে বড় করে উপস্থাপন করতে চাই। এতে আশপাশের মানুষেরা কে কী ভাবল অথবা তাদের ওপর কী প্রভাব পরল তা আমলে নেই না। আমরা বুঝে উঠতে পারি না যে কোথায় কখন কী করা যায় আর যায় না। এ ধরনের মানসিকতার যারা আছেন তাদের মধ্যেই এমন সেলফি তোলার প্রবণতা বেশি”।

স্বপ্নভঙ্গ

আমরা প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচয়, তা থেকে প্রেম বা পরিণয়ের কথা শুনি। কিন্তু এদের একটি বড় অংশই সম্পর্কটা আর টিকিয়ে রাখতে পারে না স্বপ্নভঙ্গের কারণে। কারণ ভার্চুয়াল জগতের মানুষ আর রক্তমাংসের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই এক হয় না।

অনলাইনে যে তরুণকে অসাধারণ প্রেমিক পুরুষ মনে হয়েছিল বাস্তবে তাকে বদমেজাজী, হিংসুটে সঙ্গী হিসেবে আবিষ্কার করা খুব বিচিত্র কিছু নয়। তেমনি অপসারদের মত দেখতে ফেসবুকের আকর্ষণীয় তরুণীটিও যে বাস্তবে এমন হবে তা কে নিশ্চয়তা দিতে পারে?

শুধু প্রেম-ভালবাসাই নয় বরং পরকীয়া অথবা পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি হওয়ার মত অসামাজিক কার্যকলাপের অন্যতম মূল কারণ এই সাইবার জগত। মনবিজ্ঞানী ডা. সাকী ফারজানা আগামী নিউজকে বলেন, “একটু গভীরে গেলে আমরা দেখতে পাব যে, একটি ছেলে একসঙ্গে একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমে লিপ্ত। আবার একটি মেয়েও একাধিক ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িত। বিবাহিতরাও এমন করছেন। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। এ বিষয়গুলো কেন হচ্ছে? এ বিষয়গুলো হচ্ছেই আমাদের অসতর্ক এবং অসচেতন ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে”।

সাইবার বুলিং

অনলাইনে ঢুকে গালিগালাজ, অশ্লীল ভাষা বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য ও হুমকি পেয়েছেন এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন অথবা অনলাইনে গেম খেলেছেন এমন শতকরা ৭৯ জন মানুষই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েছেন। এবং এদের একটা বড় অংশই কম বয়সী শিশু কিশোরেরা; যাদের জীবনে এর অনেক বিরুপ প্রভাব পরেছে।

যৌন হয়রানি, অর্থনাস, সম্মানহানি এমনকি আত্মহত্যায় বাধ্য হওয়ার মতও ঘটনাও ঘটছে কারও কারও ক্ষেত্রে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে ঘটে যাওয়া এসব অপরাধের তদন্তের দায়িত্ব থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের আওতাধীন সাইবার সিকিউরিটি এন্ড গত বছর ২০১৭-তে শধু এক ঢাকা মহানগরীতেই আইসিটি অ্যাক্ট এবং পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টের আওতায় মামলা হয়েছে প্রায় ২৪৬টি। এদের মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম ডিভিশনের কাছে ৭৬টি মামলার তদন্তভার আসে। চার্জশিট এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মধ্যে মোট ২৪টি মামলার তদন্ত কাজ শেষ করে পুলিশের এ বিশেষায়িত বিভাগ।

তবে বাস্তবে সাইবার অপরাধের সংখ্যা আরও অনেক বেশি যার বেশিরভাগই আইনী আওতার বাইরে থেকে যায়। ‘যেহেতু এ বিষয়গুলো অনেক স্পর্শকাতর তাই অনেক সময়ই ভুক্তভোগী থানা-পুলিশে যেতে চান না। আবার অনেকে প্রাথমিক পর্যায়ে আইনের সাহায্য নিলেও পরবর্তীতে তার থেকে আর কোন সাড়া পাওয়া যায় না। যে কারণে তথ্য-প্রমাণের অভাবে অনেক সময়ই তদন্তের ফলাফল আসামির দিকে যায়”।

বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং এসব পরিসংখ্যান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা পুরো ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত এবং অসচেতন ব্যবহারের ভয়াবহতা অনুমান করা যায়। অতএব, তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের দেহের সুস্থতা, মনের সুস্থিরতা আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যাংকিং খাত বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে ভার্চুয়াল জগত এক ধরনের বিপ্লব সাধন করেছে। অর্থ লেনদেনের জটিলতা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। বিশ্বের এক প্রান্তে বসে অপর প্রান্তের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করা যাচ্ছে নিমিষেই আবার এই ভার্চুয়াল জগতকে অপব্যবহার করেই ব্যাংকের অর্থ এমনকি রাষ্ট্রের রিজার্ভ পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সাইবার আক্রমণে বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত কয়েকশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৪ সালে ইন্টেল সিকিউরিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়,বিশ্বে সাইবার আক্রমণজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩ সালে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধে বিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল অংকের অর্থও চুরি হয়েছে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। ক্রমাগত সাইবার অপরাধ বেড়ে চললেও তা মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাইবার নিরাপত্তায় অনেক দেশেই আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোন অবকাঠামো নেই। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ বা দমন করার কোন আইন নেই। এছাড়া দক্ষ জনবলের অভাব তো রয়েছেই। সাইবার নিরাপত্তার জন্য গবেষণার প্রতি জোর দেয়া উচিৎ। বাসার কাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগতের  ব্যবহার রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নিজের ধন-সম্পদ রক্ষায় নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে,এটা অন্যদের দিয়ে হবে না। প্রতিটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। ঘরের নিরাপত্তার জন্য গেটে ভাল মানের একটা দরজা ও তালা দরকার যাতে কেউ এতে ঢুকতে না পারে। এখন দরজা লাগানোর পরেও যদি সম্পদ চুরি হয়,তাহলে বলতে হবে ঘরের মানুষের মধ্যেই চোর রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঘরের চোর ধরার চেষ্টা করতে হবে।

কিন্তু তার আগে নিজের গেট ও তালা ঠিক করতে হবে।  প্রতিটা অফিসের কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে। কারণ কোন্‌ ফাইল,মুভি বা ছবিটা ডাউনলোড করবে, কোন্‌ অ্যাপস বা সফটওয়্যারটা ইনস্টল করবে আর কোনটা করবে না এই জ্ঞানটা তাকে দিতে হবে।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া যুবকদের অধিকাংশই ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে উদ্বুদ্ধ

সম্প্রতি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানায় পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)

এটিইউ’র অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান এক বক্তব্যে বলেছেন, হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী সময়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার ২৫০ জনের মধ্যে জরিপ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ৫৬ শতাংই মূল ধারার অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছেন। যেখানে ২২ শতাংশ মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার ও ইংরেজি মাধ্যম ও অশিক্ষিত রয়েছেন বাকি ২২ শতাংশ। সে হিসেবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়াদের প্রায় ৬০ শতাংশই সাধারণ ও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্থার। এদের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই ইন্টারনেট জগতের কোনো মাধ্যম হয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে

ভার্চুয়াল জগতে রয়েছে কোটি কোটি পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট। এসব ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পর্নোগ্রাফিক ছবি ও ভিডিও আপলোড করা হয়। চূড়ান্তভাবে এসব ওয়েবসাইট সব বয়সের মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। বিশেষকরে এসব ওয়েবসাইট শিশু-কিশোরদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। কাজেই ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতের যত ভালো দিকই থাকুক না কেন, এতে শিশু-কিশোরদের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ঠেকাতে হবে। খারাপ ওয়েবসাইটগুলো আটকে দেওয়ার মতো অনেক সফ্টওয়্যার রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। এ উদ্যোগ বড়দের পক্ষ থেকেই নিতে হবে।

ক্রাফের টিম অনলাইনে শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তায় করণীয় ২১টি টিপস তুলে ধরা হলো

১। ওয়াইফাই রাউটার প্যারেন্টস কন্ট্রোল যেমন ডাটা ইউজ লিমিট করে দেয়া। সন্দেহের তালিকায় থাকা বা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর এমন ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করে দেয়া।

২। গুগল ওয়াইফাই অ্যাপের মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমরা সহজেই শিশুদের ওয়াইফাই ইউজ শিডিউল করে দিতে পারি।

৩। ইউটিউবের জন্য বাচ্চাদের "ইউটিউব ফর কিডস" অ্যাপটি ব্যবহার করতে দেয়া, কারণ ইউটিউবেও এমন অনেক ভিডিও আছে যেগুলো দেখলে বাচ্চারা মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

৪। গুগল প্লে প্যারেন্টস কন্ট্রোলটি ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে আপনার সন্তান কি করছে, কি অ্যাপ ইন্সটল করছে এছাড়াও মুভি, টিভি শো, বই, গান এসবে কন্ট্রোল করতে পারবেন।

৫। গুগল ফ্যামিলি লিংক অ্যাপসের মাধ্যমে আপনার শিশুর লোকেশন, কোন অ্যাপ কতটুকু বা কতক্ষণ ব্যবহার করছে দেখতে পারবেন, স্ক্রিন টাইম সেট করতে পারবেন ও আরও অনেক সুবিধা পাবেন এই অ্যাপটির মাধ্যমে। এমন আরও অনেক সফটওয়্যার বা অ্যাপস রয়েছে।

৬। বাচ্চাদের ফোনের গুগল অ্যাকাউন্ট ভিজিট করে আপনার বাচ্চার এক্টিভিটিস দেখতে পারবেন।

৭। বাচ্চাদের সঙ্গে ফ্রেন্ডলি থাকুন ও অনলাইনে কার সঙ্গে বা কাদের সঙ্গে কথা বলছে, তথ্য আদান-প্রদান করছে সেই দিকে নজর রাখুন।

৮। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টস বা বাচ্চাদের ছবি ও পার্সোনাল ডেটা অনলাইনে শেয়ার বা সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

৯। নিজের লোকেশন শেয়ার না করাই ভালো, আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একদমই না।

১০। বাচ্চাদের ফোনের বা ডিভাইসের সফটওয়্যার আপডেট রাখুন ও ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।

১১। অনলাইনে কিভাবে সুরক্ষিত থাকা যায় তাদের শিখান ও বুঝান এর গুরুত্ব।

১২। আপনার শিশুর ব্যবহারের পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখুন।

১৩। বাচ্চাটির ব্রাউজিং হিস্ট্রি চেক করুন প্রতিদিন।

১৪। কৌশলে তাদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ডিভাইস দিয়ে অনলাইনে বসুন ও তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন।

১৫। "অপরিচিত কারো সঙ্গে অনলাইনে কথা বলা যাবে না" উদাহরণ দিয়ে বুঝান।

১৬। যদি মনে হয় আপনাদের বা আপনার শিশুকে কেউ অনলাইনে নজর রাখছে বা স্পাই করছে তাহলে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হন।

১৭। আপনার সন্তান আপনাকে কী বলতে চায় ধৈর্য ধরে শুনুন।

১৮। অনলাইনের খারাপ দিন ও ক্ষতিকর জিনিস যেমন ম্যালওয়ারের ব্যাপারে সতর্ক করুন।

১৯। আপনার হোম ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সিকিউর রাখুন।

২০। বাচ্চাদের ডিভাইসটি ওপেন নেটওয়ার্ক বা ফ্রি ওয়াই-ফাইতে কানেক্ট করাবেন না বা করতে দিবেন না।

২১। কোন লিংক বা অ্যাডে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সব সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও কোন ধরনের সাইবার ক্রাইম, বুলিং বা হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন। জরুরি পুলিশ প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে বিনামূল্যে করবেন।

আগামীনিউজ/প্রভাত