অনুমোদনহীন পণ্য ও রাজস্ব ফাঁকিতে চলছে ই-কমার্স ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩০, ২০২১, ০৫:১৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে দেশে শুরু হয় ই-কমার্স ব্যবসা। প্রথম দিকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন, মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলা করে বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনলাইনে কেনাকাটা। তবে করোনাভাইরাস মহামারি ই-কমার্স খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ করোনাকালে ই-কমার্সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। করোনার আগে যেখানে বিশেষ উৎসব ও উপলক্ষ্যে পোষাক-পরিচ্ছদ, প্রসাধনী ইত্যাদি পণ্য কেনাকাটা হতো বেশি। করোনা শুরু পর থেকে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বড় বাজার হয়ে ওঠেছে ই-কমার্স।  প্রথম দিকে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন, মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত করাই প্রধান লক্ষ থাকলেও এখন নানাভাবে প্রতারিত হতে হচ্ছে গ্রাহকদের এমনকি এ খাত থেকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদনকৃত প্রতিষ্ঠানের পণ্য সামগ্রীর বাইরের পণ্যও বিক্রি হচ্ছে অনলাইন এই প্লাটফর্মগুলোতে। ভ্যাট-ট্যাক্স ও বিএসটিআই এর লাইসেন্স ব্যতীত এসব পণ্য সামগ্রী বিক্রির ফলে একদিকে গ্রাহক যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দারাজ, চালডাল, প্রিয় শপ এবং ইভ্যালিসহ অনেক  ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। শুধু নিত্য পন্য ও প্রসাধনী সামগ্রীই নয় ঔষধ এবং বিদেশী পণ্যও বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই। যেখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া ফার্মেসী খোলার সুযোগ নেই সেখানে দারাজ ও ইভ্যালি বিক্রি করছে অনলাইন ঔষধ। এছাড়াও নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক ঔষধ ই-কমার্স ব্যবসায়ে সয়লাব।

জানা গেছে, অনুমোদন প্রাপ্ত ফার্মেসী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রেসক্রিপশন দেখে অনলাইনে ঔষধ বিক্রি করতে পারবে তাছাড়া বিক্রির সুযোগ নেই। তবে কিভাবে দারাজ, ইভ্যালির মত এত বড় ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান  ঔষধ বিক্রি করছে তার সঠিক কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বিদেশী অনেক পণ্য সহজেই বিক্রি হচ্ছে। অবৈধভাবে দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন না নিয়েই চলছে এসব পণ্য। এমনকি দেশীয় কোম্পানির যেসব পণ্য বিএসটিআই এর তালিকাভুক্ত নয় সেগুলোও চলছে অবাদে বিক্রি।

ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনুমদোন ছাড়া ঔষধ বিক্রি করতে পারে কি’না জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম আগামী নিউজকে বলেন, আমরা ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঔষধ ব্যবসায়ে আলাদা কোন অনুমোদন দেইনি। তবে দারাজ-ইভ্যালি তো ৩য় পক্ষ হিসেবে ঔষধ বিক্রি করছে। ৩য় পক্ষ হয়ে যে কেউ ঔষধ বিক্রি করতে পারবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরুণ আপনার ঔষধের প্রয়োজন বাসার কাজের মানুষটিকে ফার্মেসীতে পাঠালেন এখানে তো ফার্মেসী মালিকের কিংবা আপনার বা কাজের মানুষটি তো কোন অপরাধ করে নাই। দারাজ, ইভ্যালি ও অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তো একই কাজ করছে। তবে তারা যদি কোন অবৈধ ঔষধ কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ন ঔষধ বিক্রি করে তবে সেটা অবশ্যই অপরাধ।

ব্যক্তি প্রয়োজনে কাজের মানুষ পাঠিয়ে ঔষধ নিয়ে আসা আর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ঔষধ সরবরাহ করা কি একই বিষয়? এক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রয়োজন নেই, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কিছু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে ঔষধ ব্যবসার অনমোদন দিয়েছি তবে কাদের দেয়া হয়েছে সেটা এই মুহুর্তে মনে নেই। তাছাড়া ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঔষধ বিক্রি করতে পারবে কি’না এবং সেটার অনুমদোন নেয়া লাগবে কি’না এ বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই। এরপর তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আসরাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

তবে মোঃ আসরাফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর উপ-পরিচালক রিয়াজুল হক আগামী নিউজকে জানান, দেশে বিএসটিআইএর তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনুমোদন প্রাপ্ত যেকোন পণ্যই ই-কমার্স ব্যবসায়ে বিক্রি করা যাবে সেটা অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিজ্ঞাপন দিয়ে হোক কিংবা সোশ্যালমিডিয়া ব্যবহারে এখানে কোন বাধা নেই। তবে অনুমোদহীন এবং সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কোন পণ্য বিক্রি করতে পারবে না এসব প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এসব পণ্য যাতে কোন প্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে না পারে তার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব পণ্য সামগ্রী সহজেই বিক্রি হওয়ায় রাতারাতি প্রতিষ্ঠা পাওয়া অনেক কোম্পানিও তাদের প্রচারের মাধ্যম হিসেবে এই প্লাটফর্মগুলোকে বেছে নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের সঠিকতা যাচাই না করেই প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের পণ্য সামগ্রীর অবাধে প্রচার চালানো হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে শুধু প্রতারণাই নয় সঠিক পণ্যটি চিনতে সংশয়ে পড়েছেন তারা।  এসব বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের জন্য তদারকি সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অ্যাকসেস টু ইনফরমেরশন প্রোগ্রাম (এটুআই) এর নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে  এই অনলাইন বিজ্ঞাপনে ভ্যাট-ট্যাক্স বসানো ও মান যাচাই করে বিজ্ঞাপনের সুযোগ দেয়া দরকার তা না হলে অবৈধ এসব কোম্পানি যেমন দুরন্ত গতিতে গজিয়ে উঠবে এবং এদের মানহীন পণ্যে বিপাকে পড়বে সাধারণ জনতা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং সরকারও এ খাত থেকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। 

আগামীনিউজ/এএইচ