খয়ের

ড. নিম হাকিম জানুয়ারি ২৪, ২০২২, ০৩:২৩ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

পরিচিতিঃ (Botanical Name: Acacia catechu Willd, Common Name: Khoyer, Enghlish Name: Catechu, Family: Mimosaceae)

খয়ের মাঝারি আকারের কন্টকময় বৃক্ষ। গাছের ত্বক অমসৃণ ও ধূসর বর্ণের। কাঠ খুবই শক্ত। বহিদের্শ পীতাভ সাদা বর্ণের এবং ভিতরের কাঠ গাঢ় কমলা বর্ণের, দেখতে অনেকটা রক্তবর্ণের মনে হয়। কাঠে উই পোকা ধরে না। পাতা বাবলা পাতার মতো দেখতে কিন্তু আরো ছোট এবং বোঁটার গোড়ায় কাটা আছে। ফুল ফিকে পীতবর্ণের খয়েরী। শুঠি চওড়া, পাতলা ও ধুসর বর্ণের।এতে ৫-৬টি প্রায় গোলাকার বীজ থাকে। বর্ষাকালে ফুল ও শীতকালে ফল হয়।

প্রাপ্তিস্থানঃ খয়ের এর আদি নিবাস ভারতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়ানো অবস্থায় কিছু কিছু খয়ের গাছ দেখা গেলেও এই গাছ দেশের উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে বেশি দেখা যায়।

চাষাবাদঃ বীজ হতে খয়ের এর বংশবিস্তার করা যায়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। বীজ সংগ্রহের পর ২-৩ দিন রোদে শুকানো হয়। বীজ সংগ্রহের এক মাসের মধ্যে বিসতলায় বপন করলে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। মাটিতে বেশি গোবর মিশ্রিত বীজতলায় বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বীজ লাগানোর ৭-১৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদগম শুরু হয় এবং এক মাস পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলে। স্বাভাবিকভাবে অঙ্কুরোদ্গমের হার ৩০-৩৫%।চারা গজানোর ১৫-২০ দিনের মধ্যে মাটি ও গোবর (৩ঃ১) ভর্তি পটে চারা রাখতে হয়। ৩-৪ মাস বয়সের চারা মাঠে লাগানো যায়। অপেক্ষাকৃত শুকনো মাটিতে এর চাষ ভালো হয়। পুষ্ট চারা থেকে ষ্ট্যাম্প অর্থাৎ মূল এবং বিটপ কাটিংয়ের মাধ্যমে অঙ্গজ বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে।

লাগানোর দূরত্বঃ ১০ থেকে ১৫ ফুট।

উপযোগী মাটিঃ বেলে দো-আঁশ মাটিতে খয়ের ভালো জন্মে। 

বীজ আহরণঃ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজ সংগ্রহের পর দুই-তিন দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হয়।

প্রতি কেজিতে বীজের পরিমাণঃ প্রায় ৪ হাজার।

প্রক্রিয়াজাতকরণ/সংরক্ষণঃ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহকাল। বীজ দু-তিন দিন রোদে শুকিয়ে ১-১/২ মাস সংরক্ষণ করা যায়।

ব্যবহার্য অংশঃ কাঠের সার অংশ, ছাল ও বীজ। 

উপকারিতা/ লোকজ ব্যবহারঃ খয়ের উদরাময় ও আমাশয় রোগে উপকারী। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে ও জ্বর করে। পুরাতন ক্ষত, সিফিলিসের নতুন ক্ষত, গনোরিয়া এবং অধিক রজঃস্রাবে ও শ্বেতস্রাবে উপকারী।

কোন অংশ কিভাবে ব্যবহৃত হয়ঃ

  • খয়ের ছালসহ কাঠ টুকরো করে পানিতে জ্বাল করে খয়ের তৈরি হয়।
  • শরীরে বেশি পাচড়া হলে খয়ের এর কাঠ ভালোভাবে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে তিন-চারবার খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
  • ২/৩ গ্রাম খয়ের আধা কাপ পানির সাথে দিনে তিনবার করে ১৫ দিন খেলে পুরাতন আমাশয় ভাল হয়।
  • ১০/১৫ গ্রাম খয়ের খয়ের কাঠ পানিসহ ভাল করে সিদ্ধ করে সকাল-বিকাল খেলে মেদ কমে যায়।
  • খয়ের কাঠ পানিতে সিদ্ধ করে পানি খেলে কিছুদিনের মধ্যে ফোঁড়ার উপকার পাওয়া যায়। 
  • খয়ের কাঠ সিদ্ধ পানি দুধে মিশিয়ে বেশ কিছুদিন খেলে শ্বেতী দাগ চলে যায়।
  • খয়ের কাঠ  এবং কাঠের কাথ্ব পানিতে সিদ্ধ করে যথাক্রমে নব প্রসূতির জ্বর, কাশি, শোথ, ফুলা রোগে উপকার পাওয়া যায়।
  • অনেক সময় দাঁতের মাড়ি মাঝ ফুলে যায়, রক্ত পরে, মুখে দুর্গন্ধ হয়। এক্ষেত্রে খয়ের পানিতে ভিজিয়ে সেই পানিটা কেবল মুখে কিছুক্ষণ রেখে ফেলে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
  • খয়ের ভিজিয়ে ঐ পানি খেলে রক্ত আমাশয় নিরাময়ে উপকার পাওয়া যায়।
  • অর্শ, সিফিলিস ও পোড়া ঘায়ে বাহ্যিকভাবে খয়ের ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
  • খয়ের পানের সাথে অধিক পরিমানে ব্যাবহার হয়।

পরিপক্ক হওয়ার সময়-কালঃ খয়ের গাছ সাধারণতঃ ৪-৫ বছরে পরিপক্ক হয় তবে পূর্ণাঙ্গ পরিপক্ক হতে ১০ বছর সময় প্রয়োজন।

অন্যান্য ব্যবহারঃ খয়ের কাঠ ঘরের খুঁটি, গরুর গাড়ির চাকা, লাঙ্গল ও ঢেঁকি বানানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।খয়ের কাঠ ভাল জ্বালানি। খয়ের গাছের আঠা কাগজ জোড়া লাগানো  কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও পানের সাথে খাওয়া হয়।

আয়ঃ একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ এককালীন ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা সম্ভব।

আগামীনিউজ/নাসির