ঢাকাঃ প্রতি বছরই গরমকালে দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। গত কয়েকদিনের অসহনীয় গরমের পর এ বছরও হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের অন্যতম ভরসাস্থল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে দৈনিক সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্য সময়ে এই সংখ্যা ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ পর্যন্ত থাকে।
হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বছরে দুইটা সময়ে একটু বেশি হয়, একটি হলো বর্ষার আগে, বর্ষার পরে। এখন বর্ষার আগের মৌসুম চলছে। গতকাল ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬শ জনের কিছু বেশি, আজকেও প্রায় ৬০০, এর আগে ৬২৫, ৫৫০, ৫৮০ এরকম ছিল।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, গরমের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সবার তৃষ্ণা বেশি থাকে, যার ফলে যেখানেই সে পানি পায় সেটিই খেতে চায়। যে কারণে গরম এলেই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। সুতরাং গরমে সুরক্ষিত থাকতে আমাদের প্রয়োজন সুপেয় পানি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো সেই পানিটা আমরা অনেক সময়ই পাই না, যে কারণে বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশের ময়লাযুক্ত পানিই পান করতে হয়।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হলো, এই গরমে শীতের মতো তো আর খাবার অনেকক্ষণ ভালো থাকে না। যে কারণে খাবারে অল্পপরিমাণ জীবাণু থাকলেও সেটি এই গরমে অনেক বেড়ে যায় এবং তাদের শরীর থেকে রস বের হয়, যা খাবারের ভেতর থাকে। সে কারণেও ডায়রিয়া হয়।
করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং লবণ বেড়িয়ে যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টা অভিভাবকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। তবে, এর চিকিৎসা খুবই সহজ। যতবার পাতলা পায়খানা হবে, ততবার একটি করে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এমনিতেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসারও প্রয়োজন হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গত কিছুদিন সারা দেশে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এতে করে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র গরমের ফলে সবচেয়ে বেশি হয় ডিহাইড্রেশন। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় যখন তীব্র গরমে বাইরে দীর্ঘক্ষণ কাজের কারণে ডিহাইড্রেশনের একটা স্টেজে শরীরের হিট রেগুলেটিং (তাপ নিয়ন্ত্রণ) অকৃতকার্য হয়ে পড়ে। ফলে অনেক হাই টেম্পারেচারেও শরীরের ঘাম থাকে না। এমনকি একটি পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে, এটিকে বলা হয় হিটস্ট্রোক।
তিনি বলেন, অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ যারা রাস্তায় কাজ করে, বাধ্য হয়েই রাস্তাঘাটে শরবত ও পানি খেতে হয়, যে কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এছাড়াও টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসসহ এ ধরনের রোগীও প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি এই সময়ে যারা বিভিন্ন শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত, তাদেরও শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ হাঁপানি দেখা যাচ্ছে।
এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, নিয়মিত যাদের বাধ্য হয়ে বাইরে যেতে হচ্ছে, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, লেবার যারা আছে, তারা এই গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য যারাই এই গরমে বাইরে গিয়ে কাজ করবেন, তাদের দুই ঘণ্টা পরপর ছায়ায় বসে ১৫-২০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। নয়তো তাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে।
করণীয় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, গরমে শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়। এ জন্য প্রচুর পানি, লবণ মিশ্রিত পানি, ওরস্যালাইন, ডাব খেতে হবে। তবে বাইরে যদিও এসব খাবার খেতে গেলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রাস্তাঘাটের অস্বাস্থ্যকর শরবত খাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সারাদেশেই গত কিছুদিন যাবত তীব্র গরম চলছে। আর গরম এলেই আমাদের ডায়রিয়া পরিস্থিতি কিছুটা বাড়ে। এই গরমে হাসপাতালগুলোতে কিছু ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী এলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে নিজেকে সুস্থ রাখতে আমাদের সবাইকেই সচেতনতা মেনে চলতে হবে।
এমআইসি