ঢাকাঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, প্রতিবছর আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের যে জনসংখ্যা আছে তাদের সেবা দিতে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বাড়াতে হবে। হাসপাতালগুলোতে শয্যার সংখ্যাও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাহিদার তুলনায় কম।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ১০-১৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলোতে চিকিৎসকের এ সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বলছে, আমাদের আরও চিকিৎসক প্রয়োজন। এমনকি হাসপাতালগুলোতে পরিমাণের তুলনায় আসন সংখ্যাও অপ্রতুল। সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের যে জনসংখ্যা আছে তাদের সবার জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু যদি জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে সম্ভব নয়। তবে জনসংখ্যা অবশ্যই সম্পদ।
কোয়ালিটি জনসংখ্যা প্রয়োজন উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে শিক্ষা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শেষ পর্যায়ে কর্মেরও ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের শিল্প বাড়ছে, তার চেয়ে জনসংখ্যা আরও বেশি বাড়ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যা এখন ৮০০ কোটির বেশি। যা প্রতি সেকেন্ডে আরও বাড়ছে। অথচ আমাদের পৃথিবীতে জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা ১ হাজার থেকে ১২শ কোটির বেশি নয়। সেদিকে খেয়াল রেখে আগামীতে পথ চলতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি বা তারও একটু বেশি। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের দেশে এত জনসংখ্যার বাস। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১২শ বা তারও বেশি মানুষের বাস। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ চীন কিংবা ভারতও জনবহুল দেশ। তারপরও সেসব দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব এত বেশি নয়। সেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০০ থেকে ১৫০ মানুষের বাস। ফলে এ দিকটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, এই বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মের ব্যবস্থা করতে হয়। আমরা সেগুলো করে যাচ্ছি। তবে আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ শিক্ষার আওতায় আসছে। অথচ জনসচেতনতা বাড়ছে না। প্রতিবছর ৩০ লাখ শিশুর জন্ম হচ্ছে। বছরে প্রায় ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান দিতে হচ্ছে। এসব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সরকারের নিশ্চিত করতে হয়। যা সহজ নয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য ভালো, এমন বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখন ভাবতে হবে। সব দেশের সমস্যা ও সমাধান একরকম নয়। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে তা সম্ভব হবে না। সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য দরকার। তাহলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত জনগোষ্ঠী উপহার দিতে পারবো।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে জাহিদ মালেকের মন্তব্য, ‘বাল্যবিয়ে রুখতে হবে। পরিবার পরিকল্পনায় আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমিত রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।’
পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার কথায়, ‘দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের সব ধরনের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দেখতে হয় সরকারকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে সীমাবদ্ধতা আছে। ফলে দেশের জনসংখ্যা সঠিক পর্যায়ে রাখতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিহান আরা বানুসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে জনপ্রতিনিধি ও পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। এছাড়া কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনলাইন, প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশনের সাত জন সাংবাদিককে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
এমবুইউ