ঢাকা: করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার ঘটনায় ভিডিও সরিয়ে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন ‘কিটো ডায়েট’ দিয়ে আলোচনায় আসা চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবির।
মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব ভেরিফায়েড পেজে তিনি লিখেছেন, ‘করোনার টিকা বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমার অসাবধানতাবশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি।’
ডা. জাহাঙ্গীরের পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
আসসালামু আলাইকুম, আমি ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর।
সুস্থ থাকার লক্ষ্যে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা নিয়ে কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরে আমার রোগীদের লাইফস্টাইল মডিফিকেশনের পরামর্শ দিয়ে আসছি। ইদানিংকালে আমার একটি ভিডিও এবং দুইটি পোস্ট নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত সুস্থ থাকার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আমি একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলাম সেখানে করোনার টিকা বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমার অসাবধানতাবশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি।
একইসাথে সকলকে টিকা দেওয়ার জন্য পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়েছি। এরপরেও কয়েকজন সম্মানিত ডাক্তার আমাকে ভুল বুঝে সরাসরি আমার নাম উল্লেখ করে নানান রকম পোস্ট করেন। তন্মধ্যে একটি পোস্টের স্ক্রিনশট আমি আমার পেইজে শেয়ার করেছিলাম।
এছাড়া অন্য একটি জনসচেতনতামূলক পোস্টে উদাহরন স্বরূপ একটি প্রেসক্রিপশন শেয়ার করেছিলাম। ঐ প্রেসস্ক্রিশনটি যিনি লিখেছিলেন তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি তার নাম ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বারটি প্রকাশ করিনি। তথাপি এই পোস্টটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তৎক্ষণাৎ দুটি পোস্টই ডিলিট করে দেই। আমি বিশ্বাস করি আমাদের ডাক্তার সমাজের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসেবা করে যাচ্ছেন, মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন, এজন্য প্রত্যেক ডাক্তারই আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন। একজন ডাক্তার হিসেবে আমি কখনোই কাউকে অসম্মান করতে পারি না এবং আমি তা করতে চাইও না।
তবুও আমার অনিচ্ছায় তা হয়ে থাকলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর বাইরে আরও যে বিষয়ে সমালোচনা এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হল আমার পরামর্শকে কিটো ডায়েট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি বহুবার নানান ভিডিওর মাধ্যমে বলেছি যে আমি শুধু ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলি না। আমি মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি অটোফেজি, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক প্রশান্তির চর্চা করাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেই। আমি কখনোই ঔষধ বিরোধী না, আমি সব সময় বলে এসেছি জরুরি চিকিৎসায় ঔষধ অপরিহার্য। তবে লাইফস্টাইল রোগগুলো লাইফস্টাইল মডিফাই করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও আমার রোগীদের প্রয়োজনে ঔষুধ লিখছি সুতরাং ঔষধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি যেন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে পারেন।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যেসব রোগীরা সরাসরি আমার পরামর্শ নেন আমি তাদেরকে নিয়মিত অবজারবেশনে রাখার চেষ্টা করি এবং কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে আমার পরামর্শের নানান প্রভাব ও প্রতিকারের বিষয়ে আলোকপাত করে থাকি। সর্বোপরি আমি মনে করি, চিকিৎসক সমাজে আমরা সবাই সহকর্মী, একে অপরের সহযোগী। এখানে রয়েছেন আমার সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ, শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই-বোন, বন্ধুরা ও আগামীর সম্ভাবনাময় জুনিয়র ডাক্তারগণ। জনস্বার্থে সকল চিকিৎসকই একেকজন যোদ্ধা। করোনা মহামারীর এই চরম দুর্দিনে ডাক্তারদের মতো যোদ্ধারাই নিজেদের জীবন ঝুঁকির কথা ভুলে জরাগ্রস্থ মানুষের পাশে থেকেছে এখনো আছে। আজকের পুরো বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
আমি সকলের প্রতি সম্মান রেখে বলছি মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে তাই আপনারা আমার কোন ভুল ধরিয়ে দিলে আমি তা শুধরে নিব। নিজের ভুলকে আমি ভুল হিসেবে গ্রহণ করে তা শুধরে নিব আর আপনাদের কাছেও আমার অনুরোধ আপনারা আমার পূর্বের ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেননা আমরা তো সকলে মিলে মানব সেবার ব্রতেই চিকিৎসা পেশাকে বেছে নিয়েছি আর সেজন্য আমরা একে অপরের প্রতি সম্মান রেখে একযোগে কাজ করতে পারি। আমি নিজেও একজন চিকিৎসক, সবসময়ই প্রত্যেক চিকিৎসকের সম্মান রক্ষা ও অবদান স্বীকার আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। বহু আগে থেকেই আমি নিজেও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে সোচ্চার আছি। সেই লক্ষ্যে আমি ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেসপন্সিবিলিটিস (FDSR) এর সাথে প্রোগ্রাম করেছিলাম, তা আমার পেইজ থেকে শেয়ার করেছিলাম সকলের উদ্দেশে। তবুও মানুষ হিসেবে আমি ভুলের ঊর্ধ্বে নই। তাই আমার কথায় হয়তো অনেক সহকর্মী-সিনিয়র চিকিৎসক কষ্ট পেয়েছেন কিংবা মনক্ষুন্ন হয়েছেন। আমি তাদের সবার প্রতি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।