করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা

নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১০, ২০২১, ০৪:২০ পিএম

ডেস্ক রিপোর্টঃ করোনা ভাইরাসকে বাগে আনা তো দূরের কথা। এর মর্জি বুঝতেই গলদঘর্ম হচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে খুবই দ্রুত গতি প্রকৃতি বদলে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকেই হতে হয়েছে নাস্তানাবুদ। তবে ভারতের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছাড়াচ্ছে বিশ্ব রেকর্ড। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হচ্ছে, যে কোনো মুহূর্তে ভারতে আছড়ে পড়তে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ। তবে কখন এই ঢেউ ছড়াবে তার কোনো সময় জানাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যে কোনো সময়েই তা আছড়ে পড়তে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কা শুধু ভারতের জন্য নয়; বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশি। ভারতের বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারত যথেষ্ট ‘সিকোয়েন্সিং, করছে না বা করতে পারছে না বলে এখনো বোঝা যাচ্ছে না যে ‘ভারত ভ্যারিয়েন্ট’ ঠিক কতটা সংক্রামক এবং কতটা বিপজ্জনক। তবে ‘ভারত ভ্যারিয়েন্ট’ যে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তার আলামত স্পষ্ট। এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দেশে এটি শনাক্ত হয়েছে যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনও রয়েছে। বাংলাদেশেও এরই মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতিতি মিলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল শনিবার জানিয়েছে, যশোরে কোয়ারেইন্টাইনে থাকা ভারতফেরত ছয়জনের শরীরে এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও। সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে দুই সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। রেল ও আকাশ পথে যোগাযোগও বন্ধ। তবে দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালকরা সরাসরি প্রবেশ করছেন এসব বন্দর দিয়ে। আর করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশি ট্রাকচালকরা। 

ইতোমধ্যে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। আবার সেখান থেকে যাত্রীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে পরবর্তীতে তাদের আবার খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ভারতের ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে, এমন আশঙ্কাই বিশেষজ্ঞদের।

ভারতের আইইসিএমআরের গবেষণা বলছে, বাধা না থাকলে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি ৩০ দিনে ৪০৬ জনকে সংক্রমিত করে। দেশে ভারতের ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে পড়লে যে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ এবং তা যে সামাল দেয়া যাবে না- এ বিষয়ে বেশ কয়েকবারই সতর্ক করেছে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর তাই সতর্ক হবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও বলেছেন তিনি। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ভারতের অবস্থা বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে সেটা যাতে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই এখনো আশঙ্কার বাইরে যেতে পারেনি। আর এখন একটু কমছে, দুদিন পর যে বাড়বে না তা কেউ বলতে পারে না। করোনার টিকা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া উপায় নেই। মাস্ক পরতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করার কোনো সুযোগ নেই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক পরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ বলেন, গত কয়েক মাসে দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব মানুষের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে ভারতে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কাও করেছে দেশটির বিজ্ঞানীরা। যা আমাদের জন্য অনেক বড় ঝুঁকি। ইতোমধ্যে ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা। আমরা জানি, ভারতের নতুন ধরনটি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করা একটি ভালো সমাধান হতে পারে, কিন্তু সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করা কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। তাছাড়া এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে সীমান্ত বন্ধ রাখাও সম্ভব নয়। তাই একমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই ঝুঁকি নিরসন সম্ভব।

সুত্রঃ ভোরের কাগজ