কে হচ্ছেন রামেবির পরবর্তী ভিসি?

রাজশাহী প্রতিনিধি এপ্রিল ২৯, ২০২১, ০১:০১ পিএম
ফাইল ফটো

রাজশাহীঃ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) বর্তমান ভিসি (ভাইস চ্যান্সেলর) অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পরবর্তী ভিসি নিয়োগ চূড়ান্ত না হওয়ায় বেশ আলোচনা চলছে রাজশাহীর চিকিৎসক মহলে। ভিসি পদে নিয়োগ পেতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম আহসান হাবিব নান্নুর নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। আলোচনায় আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মোস্তাক হোসেন তুহিন। বর্তমান ভিসি ডা. মাসুম হাবিব দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় এবং তার বিরুদ্ধে বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার নাম বিবেচনায় নেয়নি। তবে শেষ সময়ে এসে তিনিও ভিসি পদে পুনরায় নিয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে থাকতে জোর তদবির শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এখন দেখার অপেক্ষা কার ভাগ্যে ছিঁড়ে ভিসির শিঁকে।  

সূত্র মতে, রামেবির ভিসি পদে নিয়োগ পেতে বর্তমান ভিসি ডা. মাসুম হাবিব ছাড়াও রাজশাহীর চারজনসহ আরও ৭-৮ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন। ডা. মাসুম হাবিব রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর সরকার তাকে রামেবির ভিসি হিসেবে চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি যোগদান করেন।

তবে ভিসির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ডা. মাসুম হাবিবের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি, আত্মীয়করণ, জামায়াত-বিএনপি প্রীতি ছাড়াও শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকায় থাকা, অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়া, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আসন বৃদ্ধি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি গাড়ি-বাড়ি ব্যবহারে দুর্নীতিসহ বহু অভিযোগ উঠে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক অভিযোগ দেন সংক্ষুব্ধরা। এমনকি তার অপসারণ চেয়ে আন্দোলনও করে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এছাড়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ মাস থেকে চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি অফিস করতে পারেন না। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তার পুনর্নিয়োগের আবেদন বিবেচনা করেনি বলে সূত্র জানায়। এরপরও তিনি ভিসি পদে পুনর্নিয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে থাকতে জোর তদবির শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্ভাব্য ভিসি প্রার্থীর আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. একেএম আহসান হাবিব নান্নু। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) হিসেবে কর্মরত। এখানে তিনি সফলতার সহিত ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষর এমবিএস, বিডিএস, আইএইচটি, ম্যাটসসহ সকল ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পূর্ণ করেছেন। ৯ম বিসিএস’র স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত এ প্রগতিশীল চিকিৎসক বিএমএর প্রাক্তন কাউন্সিলর এবং স্বাচিপের আজীবন সদস্য।

এর আগে তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ৮ বছর উপাধ্যক্ষ এবং অধ্যক্ষ হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি কলেজে ৮টি বিষয়ে ¯œাতকোত্তর কোর্স চালু, আসন সংখ্যা বৃদ্ধিসহ কলেজের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। ৩০ বছরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান স্বরুপ রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ান এন্ড সার্জন গ্লাসগো থেকে ‘অনারারী এফআরসিপি’ ডিগ্রি, আমেরিকা কলেজ অব কার্ডিলিওজি থেকে এফএসিসি, আমেরিকা কলেজ অব চেষ্ট ফিজিসিয়ান থেকে এফসিসিপি (অনারারী) ডিগ্রি লাভসহ বিভিন্ন সনম্মান লাভ করেন।

সূত্র জানায়, আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মোস্তাক হোসেন তুহিন। স্বাচিপ নেতা ডা. মোস্তাক হোসেন ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রামেক শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বুলবুল হাসান, রামেকের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হাবিব ও ডা. মহিবুল হাসানের নাম প্রথম দিকে শোনা গেলেও বর্তমানে তারা আলোচনায় নেই বলে সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রামেবি’র বর্তমান ভিসি ডা. মাসুম হাবিব বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচার হচ্ছে। তবে সরকার আমাকে আবারো ভিসির দায়িত্ব দিবে বলে আমি আশাবাদী। অধ্যাপক ডা. একেএম আহসান হাবিব নান্নু বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী। সরকার যেখানে আমাকে যোগ্য মনে করে দায়িত্ব প্রদান করবে, আমি সেখানেই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো।’ ডা. মোস্তাক হোসেন তুহিন বলেন, ‘আমরা দুঃসময়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়েছি। সরকার দায়িত্ব দিলে আমি তা পালন করতে রাজি আছি।

আগামীনিউজ/এএস