গাজীপুরঃ জেলার শ্রীপুর উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী আকরাম হোসাইনের স্ত্রী মনিরা সুলতানা মুনমুন একজন কৃষি উদ্যোক্তা। ছাদ কৃষিতে অবদান রাখায় এ নারী উদ্যোক্তা আগামী রবিবার (৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণে প্রথম পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। “বৃক্ষ রোপনে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার-২০২০” এর জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৭ জন ব্যাক্তি ও ১৬ প্রতিষ্ঠান এ পুরষ্কার পাবেন।
মনিরা সুলতানা মুনমুন বলেন, ২০১৪ সালের দিকে নিজের শখ থেকে ছাদে কিছু গাছ লাগিয়েছিলেন। এরপর ভাবতে থাকেন কিভাবে এটিকে উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যিক করা যায়। আর সে চিন্তা থেকেই বিভিন্ন জাতের ওষুধি গাছ, সবজি ও নানা ধরনের ফলের গাছ সংগ্রহে লেগে যান। পৃথিবীর নানা দেশ থেকে গাছ ও গাছের চারা আমদানি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে বাগান পরিচর্যার পাশাপাশি বিদেশী মাছ পালনের পানির হাউস থেকে গাছের গোড়ায় পানি সেচ দেন। গত আট বছর যাবত ছাদ কৃষিতে সময় দিয়ে আসছিলেন মুনমুন। করোনা মহামারীর সময় একটু বেশি মনোযোগী হয়েছিলেন সুবজ প্রকৃতির ওপর। ২০১৯-২০২০ বছরে তাঁর ছাদ সবুজে ছেয়ে যায়। আর সে বছরই ছাদ কৃষির একজন প্রতিযোগী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন করেন।
মনিরা সুলতানা সপরিবারে নিজ গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গাজীপুর মহানগরের উত্তর ছায়াবীথি এলাকার নিজ বাসায় বসবাস করেন। চার তলা ভবনের ওই ছাদ বাগানে গিয়ে দেখা গেছে পানির হাউজে বিদেশী রং বেরংয়ের মাছ পানিতে ভেসে খাবার নিচ্ছে। লতা, গুল্ম, বাহারি ধরণের টবে বাহারি গাছপালা, কোনোটার লতা বেয়ে বেয়ে ছাউনী তৈরী করেছে আবার কোনোটা ঘন সবুজের ফাঁক দিয়ে রঙিন ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা ও পদ্ম বড় বড় পানির পাত্রে একত্রে ফুটে উঠেছে। পাখির কল কাকলিতে ব্যস্ত রয়েছে ছাদ বাগানের চারপাশ।
ছাদ কৃষির উদ্যোক্তা মনিরা সুলতানা মুনমুন বলেন, ওষুধি, ফুল, ফলসহ বাহারী গাছ রয়েছে তার ছাদ বাগানে। ওষুধির মধ্যে অর্জুন, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, ঘৃতকুমারী, নিম, তুলসী, থানকুনি, বাসক, পেইন কিলার, অ্যাড্রেসিয়া বেরি, ডেইজি, ভ্যানিলা অর্কিড, কর্পূর, জয়ত্রী, গোল মরিচ, সুইট রেসিন, ট্রি রেসিন, কারি পাতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সবজির মধ্যে রয়েছে লেটুস, করলা, ধনেপাতা, বেগুন, কাঁকরোল, পটল, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, লাল ঢেঁড়স, শিম, শসা, টমেটোসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতি। গাছগুলোর গোড়ায় মাটি না দিয়ে সেখানে দেওয়া হচ্ছে নারকেলের ছোবড়া ও অন্য কৃষি উপকরণ। ছাদকৃষি শুধু নিজের মধ্যে না রেখে তিনি তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্যদের মাঝেও। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রয়োজনীয় পরার্মশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, অল্প জায়গাতে বা একটি টবে একাধিক গাছ লাগিয়ে কিভাবে সুফল পাওয়া যায় সেভাবেই তার ছাদ বাগান সবুজায়ন করেছেন। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উপায়ে অধিক জাত ও ফলনের বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। এতে ছাদ বাগানে নানা জাতের গাছপালা স্থান পেয়েছে। আর এ কারণেই হয়তো তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বলে মনে করছেন।
উদ্যোক্তা মুনমুনের একমাত্র কন্যা তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিফতা জানায়, প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কারের জন্য তার মায়ের মনোনয়নের খবরে সে অনেক খুশি। বাগান পরিচর্যায় মাঝে মধ্যে সেও তার মায়ের সাথে সহযোগিতা করে থাকে বলে জানায়।
উদ্যোক্তা মুনমুনের স্বামী আমেরিকা প্রবাসী আকরাম হোসেন বাদশা বলেন, একজন মানুষের শারিরীক শক্তি ৪০ এবং মানসিক শক্তি ৬০ ভাগ। স্ত্রীর ছাদ বাগান দেখে তাকে মানসিক শক্তি যুগিয়েছি। সে যেন মানসিকভাবে ক্লান্ত না হয়ে পড়ে। উদ্যোক্তা তৈরী এবং কৃষিতে দেশ সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য স্ত্রীর এসব ক্ষেত্রে যখন যা প্রয়োজন পড়েছে তাতে সহযোগীতা করেছি মাত্র। আগামী রবিবার (৫ জুন) বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন অবদান রাখায় পুরষ্কার নেওয়ার ব্যাপারে মুনমুন ইতোমধ্যে বার্তা পেয়েছে।
পরিবশে বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দীপঙ্কর বরের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, গত সোমবার (২৩ মে) ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সাত ব্যাক্তি ও ১৬ প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়। এর মধ্যে “বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন” পর্যায়ে মনিরা সুলতানা মুনমুন নির্বাচিত হয়েছেন।
মোক্তার হোসেন/এমবুইউ/এসএস