ফরিদপুরঃ দেশে সচরাচর গ্রীস্মকালে তরমুজের ব্যাপক আবাদ হলেও দেশে প্রথমবারের মতো বর্ষাকালীন সময়ে তরমুজের আবাদ করে আশানুরোপ সাফল্য পেয়েছেন তরমুজ চাষী বোরহান মাহমুদ। বর্ষা মৌসুমে তরমুজের ফলন দেখে খুশি গ্রামাবাসী।
তরমুজের মৌসুম গ্রীষ্মকাল। কিন্তু তা যদি হয় বর্ষাকালে তাহলে কেমন হবে ভাবুনতো? আর সেটি করেই দেখিয়েছেন ফরিদপুর জেলার রাঙামুলারকান্দি গ্রামের তরমুজ চাষী বোরহান মাহমুদ।
সরেজমিনে দেখা যায়, তার জমিতে ছোট্ট মাঁচায় ঝুলছে কালো রঙের নানান সাইজের তরমুজ। বোরহানের তরমুজ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সারা ফেলেছে।তরমুজ খেতে ও দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে আসছেন বাগানে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তরমুজ কিনতে ছুটে আসছেন। জমি থেকেই বিক্রি করছেন সেই তরমুজ। পাইকারী ভাবেও তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
সঠিক পরিচর্যা ও দেখভালের কারনে ভালো ফলন হওয়ায় অধীক লাভবান তিনি। ব্যাপক আকারে তরমুজের চাষাবাদ করতে সহযোগীতা চান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের।
বোরহান মাহমুদ জানান, দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার পর গত দুই বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর বিভিন্ন ব্যবসার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু কোন ব্যবসায়ই তার মনমতো হচ্ছিল না। সিদ্ধান্ত নিলেন কৃষিকাজের। গতানুগতিক কোন কৃষি আবাদে না গিয়ে ভিন্ন ধরনের কিছু করার চিন্তা করলেন বোরহান। ইউটিউব থেকে কৃষি ফসলের ভিডিও দেখতে গিয়ে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ’বিষয়ে জানতে পারেন। ভিডিওটি দেখে সিদ্ধান্ত নেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ আবাদ করার।
যেই কথা সেই কাজ। শুরু হলো বোরহানের ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজের আবাদ নিয়ে গবেষণা। নিজেদের ২ বিঘা পতিত জমিতে রোপন করেন বীজ। সেই বীজ থেকে চারা গজালে তৈরী করেন মাচা। সেই মাচায় এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বোরহানের স্বপ্নের ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ। সেই তরমুজ গুলো যাতে কোন পোকা কেটে দিতে না পারে সেজন্য খেতজুড়ে ‘আলোক ফাঁদ’ বসিয়েছেন। তরমুজ গুলো ঢেকে দিয়েছেন নেটের ব্যাগ দিয়ে।
স্থানীয়রা জানান, সখের বসে বোরহান এ তরমুজের আবাদ শুরু করে। বর্তমানে সে তরমুজের আবাদ করে বেশ লাভবান। ব্ল্যাক ডায়মন্ড তরমুজ খেতে প্রচুর মিষ্টি। উপরিভাগ কালো হলেও ভেতরে টকটকে লাল। অসময়ে তরমুজ আবাদ করে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন বোরহান।
স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক জানান, স্বল্প সময়ে ফলন পাওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় তারাও এ তরমুজ আবাদে ঝুঁকেছেন। করোনাকালীন সময়ে চাকুরীর কথা না ভেবে তারা তরমুজ আবাদ করার জন্য বোরহানের কাছে প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছেন।
বোরহান জানান, তার জমিতে এখন প্রায় ৪ হাজার বিভিন্ন সাইজের তরমুজ রয়েছে। প্রতিদিনই খেত থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তরমুজ গুলো। প্রতিটি তরমুজ ১শ টাকা থেকে শুরু করে তিনশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। জমি তৈরী সহ দুই বিঘা জমিতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। আর জমিতে থাকা তরমুজ গুলো তিনি বিক্রি করতে পারবেন ৪ লাখ টাকার উপরে। সব খরচ বাদ দিয়ে সে ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: হজরত আলী জানান, বেকারত্ব দূর করতে তরমুজ চাষে জেলার শিক্ষিত যুবকদের প্রশিক্ষনসহ সরকারী সকল সুবিধা ও সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে।