ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে মশার উৎপত্তিস্থল

নিউজ ডেস্ক  জুন ২০, ২০২০, ০৮:৪১ এএম
সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: ঢাকা শহরের বাড়ি ও স্থাপনাগুলো যেন মশা উৎপাদনের ‘কারখানা’। গত ১০ কার্যদিবসে সিটি করপোরেশনের চালানো অভিযানে নগরীর অন্তত ৭০ ভাগ বাড়ি বা স্থাপনায় মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর নির্মাণাধীন ভবনেই পাওয়া গেছে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা। গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে রাজধানীতে অনেক মানুষ আক্রান্তের পর সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচার চালায় স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এতে খুব একটা সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী না করতে পারলে এবারও পরিস্থিতি নাজুক হবে। তাই বাধ্য হয়ে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরব্যাপী চলে সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম। এর মধ্যে যে সময়টুকুতে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় সে সময়ে চলে বিশেষ  কার্যক্রম। তবে মশকনিধন কার্যক্রম চালাতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মানুষের বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে প্রচুর মশা জন্ম নেওয়ার মতো পরিবেশ। সেজন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রচারমাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছি। এতে খুব বেশি সুফল আসেনি। তাই এখন বাধ্য হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের পরিচালিত অভিযানে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ ভাগ স্থাপনায় মশা জন্ম নেওয়ার মতো উপযোগী পরিবেশ। সাধারণ মানুষ একটু সচেতন হলে এ অবস্থা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। করোনাকালীন সময়ে মশকনিধন কার্যক্রম চালানো খুব কঠিন কাজ। তবুও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা এ কাজটি করে যাচ্ছেন।’

ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দেখা দেওয়ার আগেই এবার তারা তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের ৫৪টি ওয়ার্ডে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। একটি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগে পাঁচজনের একটি দল বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করছে। সেই হিসাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ জন অভিযান চালাচ্ছেন যেখানে মশকনিধনকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছেন।

ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল আজমের নেতৃত্বে সম্প্রতি অভিযান চলে মিরপুর এলাকায়। তিনি বলেন, ‘কোনো পাত্রে তিন দিন পানি জমে থাকলে এডিস মশা জন্ম নিতে পারে। মিরপুর-২ নম্বর সেকশনের এইচ ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের একটি নির্মাণাধীন ভবনে গত শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির নিচতলার পানির ট্যাংক, খালি বোতলসহ একাধিক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা। এ বিষয়ে বাড়ির মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর সেখানে মশার ওষুধ ছিটিয়ে ধ্বংস করা হয় লার্ভাগুলো। বাড়ির মালিকরা সচেতন না হলে শুধু করপোরেশনের পক্ষে এ কাজে শতভাগ সুফল নিয়ে আসা কঠিন।’

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ১০ দিনের বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। কিছু আবাসিক ভবনের পানির মিটারের ভেতরেও লার্ভা পাওয়া গেছে। অভিযানে অন্তত ৭০ ভাগ বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেছে। আর এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা।

ঢাকার দুই সিটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এটি এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী পরিবেশ। তাই আশপাশে জমে থাকা বৃষ্টির পানি অপসারণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা জানান, মশকনিধনে গত ৭ জুন থেকে সব ওয়ার্ডে চলছে অভিযান। প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগে ভাগ করে সব স্থাপনায় অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু অভিযানকালে মানুষের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা লক্ষ করছেন না তারা। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে প্লাস্টিকের খালি পাত্র, বালতি, ড্রাম, অব্যবহৃত টায়ার ও ককশিট, ভাঙা টব, পরিত্যক্ত টিন এবং নির্মাণাধীন ভবনের ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণাগার, ফেলে রাখা পাত্র, রঙের কৌটা, পাইপে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মশকনিধনের কার্যক্রম ঢেলে সাজানো হয়েছে। নতুন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে কাজ চলছে। প্রতি ওয়ার্ডে আটজন মশককর্মী সকাল ৯টা থেকে শুরু করে দুপুর ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং করছে। অন্যদিকে ওয়ার্ডপ্রতি ১০ জন মশক ক্রু দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফগিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মশার উৎপত্তিস্থল নিজেদের চারপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে নাগরিকরাও ভূমিকা রাখতে পারে।’ (খবর :দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২০ জুন, ২০২০)