করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল না বিশ্বের কোন দেশ

নিউজ ডেস্ক মার্চ ২২, ২০২০, ০৮:১২ এএম

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল না বিশ্বের কোনো দেশই। এ কারণে ইতালি, স্পেন, আমেরিক ও ব্রিটেনের মতো দেশও এখন এই রোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না। বাংলাদেশেরও একই অবস্থা। বিশেষজ্ঞরা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকার দেশ। কিন্তু দুই মাস সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে আসা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের তেমন প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি।

বিষয়টিতে ততটা গুরুত্বও দেওয়া হয়নি। করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা মাত্র একটি জায়গায় হচ্ছে। পর্যাপ্ত কিট ও পিপিইর সংকট রয়েছে। চিকিত্সক-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর সংকট। শপিং মল, হাসপাতাল, দোকানপাট—কোথাও স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গাউন ব্যবহার হচ্ছে না। এমন অবস্থার মধ্যে চীন, ইতালি কিংবা ইরানের মতো করোনার বিস্তার ঘটলে দেশের অবস্থা হবে ভয়াবহ।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে দুই জন মারা গেলেন। সত্তরোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বিদেশ ফেরত স্বজনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শারীরিক নানা জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। রাজধানীতে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার বাড়ির সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন চার জন। এতে করে দেশে এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৪ জন। গতকাল শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ৫০ জনকে। শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল ৪৪। অর্থাত্ গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ছয় জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আর বিদেশফেরতদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ২৬৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মোকাবেলায় চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক আনার চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছেন। এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ইতালিতে মৃত্যু হয়েছে আরো এক বাংলাদেশি প্রবাসীর। নিউ ইয়র্কে মারা যাওয়া দুই জনই কুইন্সের বাসিন্দা ছিলেন। খবরে বলা হয়েছে, ইতালিতে মারা যাওয়া বাংলাদেশির নাম গোলাম মওলা। তিনি মিলান শহরে সপরিবারে বসবাস করেছিলেন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জে।

রাষ্ট্রের কার্যকরী পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের মতো চরম বিপর্যয় থেকে কাটিয়ে উঠেছে চীন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে চীনের এই মডেলকে বেশি ‘কার্যকর মডেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি আছে। ইতালি, স্পেনসহ বিশ্বের শতাধিক দেশ যেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমরা স্রেফ ভরসা করে বসে আছি আমাদের রাজনীতিবিদ আর কতিপয় দায়িত্বশীলের বক্তব্যেই। আক্রান্ত দেশসমূহে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, সব পেশার মানুষ, ব্যবসায়ী কমিউনিটি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ যার যার অবস্থান থেকে অংশগ্রহণ করছেন। অর্থাত্ পুরো দেশকে কোয়ারেন্টাইন পরিস্থিতি করেছেন। কিন্তু শুরুতেই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি কোনো দেশ। যার কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হলো সবই সরকার করবে। 

মনে হয় যেন আর কারো কোনো দায়িত্ব নেই। সব রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী কমিউনিটি, এনজিও—তারা এখনো শুধু সমালোচনা করে যাচ্ছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামেনি। তাদের কোনো দায়িত্ব পালনে দেখা যায়নি, শুধু বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আরেক গ্রুপ আছে গুজব ছড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। এটার সঙ্গেও সরকারবিরোধীদের একটি প্রচার। আর ওসবে মানুষজন বিশ্বাসও করছে। বিশ্বাসের এই ভাইরাসের সংক্রমণে বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছে পুরো দেশ। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা জানান, বিদেশফেরতদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য সব দায়িত্ব মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরমধ্যে অর্থ বরাদ্দসহ সব নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক। কিন্তু আমলারা নানাভাবে কালক্ষেপণ করে পুরো কার্যক্রম বিলম্বিত করছেন। যার কারণে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মার্চের ১ তারিখের পর বিদেশফেরতদের তালিকার তথ্য বিমানবন্দর থেকে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে। যারা পালিয়ে আছেন তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তালিকা সারা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, আমাদের কাছে তথ্য দেয়নি, আত্মগোপন করেছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিত্সার জন্য শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটকে প্রস্তুত করার কথা ভাবছে সরকার। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় কয়েক লাখ সুরক্ষা সরঞ্জাম দেশে এসেছে বলেও জানান তিনি। জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নতুন সাতটি মেশিন এসেছে। এরই মধ্যে ১০০ ইউনিট আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে। নতুন করে আরো ৪০০ আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হবে। গতকাল শনিবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব হাসপাতালে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কোভিড-১৯ ভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়া রোধে বাংলাদেশ গতকাল মধ্যরাত থেকে ৩১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত ১০টি দেশ থেকে ফ্লাইট আগমন নিষিদ্ধ করেছে।

টোলারবাগের একটি বাসা লকডাউন: রাজধানীর মিরপুরে উত্তর টোলারবাগের একটি বাসায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর পরিবার থাকায় পুরো ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে। ওই ভবনে সদ্য কানাডা ও জাপান থেকে আসা কয়েকজন প্রবাসী রয়েছেন। (খবর : দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ মার্চ, ২০২০)