দখল দূষণে বিপন্ন চিত্রা

নিউজ ডেস্ক মার্চ ৭, ২০২০, ০৮:৫২ এএম

অবৈধ দখলদার ও পানি দূষণের কবলে নড়াইলের চিত্রা নদী। নড়াইল শহরের বুক চিরে প্রবাহিত চিত্রা নদী এক সময় দেশীয় প্রজাতির মাছের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত ছিল। পাট কাটার পর পাট জাগ দেওয়া এবং শহরের বিভিন্ন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে পানি দূষিত হয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। 

এ নদীর পানি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেচকাজে কৃষকের বড় সহায়। নদীর অধিকাংশ জায়গার দুই পাড় এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে। অনেকে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করছেন। অনেকে বসতবাড়ি নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ হারিয়ে ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে চলেছে। এক কালের খরস্রোতা চিত্রা নদী এখন মৃতপ্রায়। 

নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ন নৌরুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো চিত্রা নদী। লঞ্চ, ছোট স্টিমার, মালবোঝাই নৌকা নিয়মিত চলাচল করত চিত্রা নদীর বুক চিরে। নাব্য সংকটের কারণে এখন আর নৌ চলাচলের কোনো উপায় নেই। চিত্রাকে ঘিরে নৌযান চলাচলের চিত্র আজ শুধুই স্মৃতি। অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই গ্রাস করে চলেছে চিত্রা নদীর দুই পাড়। অব্যাহত দখলের কারণে চিত্রা নদী পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে কিছু পানি থাকলেও শীতকালে অধিকাংশ জায়গায় জেগে ওঠে চর। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানির প্রবাহ। তখন সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। নদীর দুই তীরের জমিতে উৎপাদিত পাট চিত্রা নদীতে জাগ দেওয়ার কারণে পানি পচে নষ্ট হয়ে যায়। যা মাছ উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া নড়াইল শহরের সব ড্রেনেজ এবং নদীতীরবর্তী আবাসনগুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত করায় দূষিত হয়েছে পানি। নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ অবিলম্বে এই নদী রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। মাগুরা শহরের উপকণ্ঠে বাঁধ নির্মাণের ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে চিত্রা নদীর প্রবাহ। 

নদী বাঁচাও আন্দেলনের নড়াইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এ মতিন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে বার বার আন্দোলন- সংগ্রাম করার পরও কেন চিত্রার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। নড়াইলকে বাঁচাতে চিত্রাকে রক্ষা করতে হবে। নড়াইল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, চিত্রার পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলমান আছে। চিত্রা নদীকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কার্পণ্যতা থাকবে না। (খবর : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৭ মার্চ, ২০২০)