দখল আর দূষণে আবর্জনার আধার আগাছা, বর্জ্য ও কচুরিপানায় রুদ্ধশ্বাসে নিষ্প্রাণ হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী নদী। একসময় জলতরঙ্গের তালে তালে উল্লাসে মেতে চলা গৌরবোজ্জ্বল নদীটি তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট এলাকার মেঘনার মোহনা থেকে শুরু করে জেলা শহর হয়ে জকসিন মান্দারী দিয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী গিয়ে মিলছে রহমতখালী নদী। ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও প্রায় ৬০ ফুট প্রস্থ ছিল এ নদী। ৪০ বছর আগেও নদীর ছিল উচ্ছল যৌবন, ছিল জোয়ার-ভাটা। বড় বড় লঞ্চ ও সাম্পান চলাচল করত এ নদীতে। এ অঞ্চলের বাসিন্দারা বাণিজ্যিক পণ্য আনা-নেওয়া করতেন এ নদী দিয়ে। কৃষিপণ্য বাজারজাত করা, ইরিগেশনসহ রবিশস্যে নদীর পানি ব্যবহার এবং নদীতে মাছ ধরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতেন এখানকার লাখো মানুষ। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে রহমতখালী এখন তার সে গৌরব ও ঐতিহ্য হারিয়েছে। কয়েক বছর ধরে দখলবাজদের অবৈধ দখলে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে বড় বড় ভবন ও দোকানপাট। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের তেরবেকী, জকসিন বাজার, মান্দারী বাজার, সদরসহ অন্তত ৫০টি স্থানে দখল করে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দখলদাররা সবাই প্রভাবশালী।
এতে করে নদীটি জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এতে করে নদীর গভীরতা কমে গিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অধিকাংশ স্থানে কচুরিপানা আর আবর্জনার আগাছায় ভরে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনসহ জনজীবনে। বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে নদীতীরের বাসিন্দাদের।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইউএসএর সাধারণ সম্পাদক অহিদুল হক বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নদীর দখলে আর দূষণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দখলবাজরা। নদীর সার্ভে করে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নির্ধারণের পর পিলার দিতে হবে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর স্বরূপ ফিরিয়ে দিতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমদ নদী দখলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে আরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। দূষণ রোধে বরাদ্দ প্রাপ্তির কথা জানান তিনি। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, ‘রহমতখালীকে দূষণমুক্ত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত আছে।’ (খবর: বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৫ মার্চ, ২০২০)