শুভ জন্মদিন এ আর রহমান

বিনোদন ডেস্ক জানুয়ারি ৬, ২০২২, ১২:১০ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ সুরের জাদুকর তিনি। তার ছোঁয়ায় নতুন প্রাণ পায় সপ্ত সুর। তামিল থেকে শুরু করে হিন্দি গান সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। পাঞ্জাবি, সুফি, পপ থেকে শুরু করে তার কম্পোজিশনে মিলেছে বাংলা বাউল সুরের ছোঁয়াও। ভারতীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় তিনি এক অপার বিস্ময়। তিনি এ আর রহমান।

আজ ৬ জানুয়ারি ভারতীয় এ সঙ্গীতশিল্পীর ৫৪ তম জন্মদিন।

১৯৬৬ সালের ৬ জানুয়ারি মাদ্রাজের (বর্তমান চেন্নাই) এক শৈব হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তার পারিবারিক নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার, ধর্মান্তরের পর নতুন নাম আল্লাহ রাখা রহমান, সংক্ষেপে এ আর রহমান।

সাংসারিক জীবনে তার সহধর্মিনীর নাম সায়রা বানু। রহমান-বানু দম্পতির ঘরে রয়েছে তিন সন্তান খাদিজাহ, রহিমা ও আমান।

এ আর রহমানের বাবা আর কে শেখর মুধালিয়ার ছিলেন মালায়ালাম মুভির একজন মিউজিক কম্পোজার ও কন্ডাক্টর।

তার মায়ের নাম ছিল কস্তুরি (মুসলিম হওয়ার পরে তার নাম হয় করিমা বেগম)।

গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানকে অনেকেই ভালবেসে মোজার্ট অব মাদ্রাজ নামে ডাকেন। তার জীবনের অন্যতম অর্জন আসে ২০০৯ সালে। ওই বছর ৮১তম অস্কার আসরে ড্যানি বয়েলের আলোচিত সিনেমা ‘স্লামডগ মিলিনিয়র’র মিউজিক কম্পোজার হিসেবে সেরা অরিজিনাল মিউজিক স্কোর ও সেরা অরিজিনাল সং ‘জয় হো’র জন্য ডাবল অস্কার জেতেন।

এ আর রহমানের সঙ্গীত কৌশল বলিউডকে দিয়েছে নতুন ধরনের সাঙ্গীতিক অভিজ্ঞতা। তারই স্বীকৃতিতে মণি রত্নমের ‘রোজা’ সিনেমার দুটি গান জিতেছিল দুটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড।

জিতেছেন একটি বাফটা, গোল্ডেন গ্লোব, চারটি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ও ফিল্মফেয়ারসহ অসংখ্য পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সেরা ১০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় তার নাম স্থান পায়।

২০১০ সালে রাষ্ট্রীয় উপাধি ‘পদ্মভূষণ’ অর্জন করেন। সম্প্রতি ব্রিটেনভিত্তিক একটি ম্যাগাজিন তাকে ‘টুমরোস মিউজিক আইকন’ উপাধি দিয়েছে।

বিস্ময়কর এ আর রহমানের যে কোনো কম্পোজিশন বের হওয়ার আগেই সুপারহিট। তার প্রতিটি গানই একটি স্বতন্ত্র শিল্প।

সাধারণ স্রোতারা তাঁর সুরে যেমন মুগ্ধ, তেমনি মুগ্ধ যারা গানের ব্যকরণ জানেন-তারাও।

গানের ব্যকরণ জানা সুধীজনের কাছে রহমান আজও এক ধাঁধা। তাঁর সুরে যেমন তামিল আমেজ থাকে, তেমনি হিন্দুস্থানী ঘরাণায় তাঁর দখল বিস্ময়কর। তাঁর কম্পোজিশনে পশ্চিমা সুর তো আছেই, সেই সঙ্গে জাপানি পেন্টাটনিক সুর উঁকি দেয়।

প্লে ব্যাক বা চলচ্চিত্রে গান গেয়ে এ আর রহমান এর আত্মপ্রকাশ বম্বে (তামিল, ১৯৯৫) ছবিতে। এর আগে তিনি অনেক গানে কোরাস এ কন্ঠ দিয়েছিলেন।

কিন্তু প্রথম কোন গানে পূর্নাঙ্গ ভূমিকা পালন করেন বম্বে সিনেমার হাম্মা হাম্মা গানটিতে। মুভি বোম্বের (১৯৯৫) তু হি রে.. গানটি এবং বোম্বে থিম মিউজিক ট্র্যাকটি এ তার অনন্য দু’টি সৃষ্টি।

তার সেরা অধিকাংশ ট্র্যাক বা মুভিই প্রথমে তামিল ভাষায় করা, যা পরে হিন্দিতে ডাব করা হয়েছে।

সেই ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি তামিল, তেলেগু, হিন্দি, মালায়ালাম, মারাঠি, কানাড়া, ম্যান্ডারিন ও ইংরেজি ভাষায় উপহার দিয়েছেন দুই শতাধিকেরও (ডাবিং ও সিঙ্গেলসহ) বেশি অ্যালবাম।

১৯৯৭ সালের ১৫ আগস্ট তার কন্ঠে প্রথম অ্যালবাম বের হয় বন্দে মাতরম শিরোনামে সনি মিউজিক কোম্পানির পক্ষ থেকে।

বন্দে মাতরম মাইলস্টোন অ্যালবামটি শুধু ইন্ডিয়াতে তখন বিক্রি হয়েছিল ১.২ কোটি পিস! ১৯৯৯ সালে জার্মানির মিউনিখে কনসার্টে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তিনি।

২০০২-এ বিশ্ববিখ্যাত কম্পোজার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রিলিজ দেন তার প্রথম স্টেজ প্রডাকশন বোম্বে ড্রিমস।

২০০৭ সালে তাজমহলকে দ্য নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স-এ স্থান পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রমোশন হিসেবে ওয়ান লাভ গানটি ৬টি ভাষায় রিলিজ দেন।

তার মিউজিক করা উল্লেখ করার মতো হিন্দি মুভিগুলো হলো বোম্বে (১৯৯৫), রঙ্গিলা (১৯৯৫), দিল সে.. (১৯৯৮), তাল (১৯৯৯), লগান (২০০১), সাথিয়া (২০০২), রাঙ্গ দে বাসন্তী (২০০৬), গুরু (২০০৭), যোধা আকবর (২০০৮), জানে তু... ইয়া জানে না (২০০৮), স্লামডগ মিলিয়নেয়ার (২০০৮), ইয়ুভরাজ (২০০৮), গজনি (২০০৮), দিল্লি-৬ (২০০৯) ইত্যাদি।

কম্পোজিশনের পাশাপাশি তিনি একজন অসাধারণ ভোকালিস্টও; হাইপিচ, স্পিরিচুয়ালিটি তার কণ্ঠের অনন্য বৈশিষ্ট্য।

এ আর রহমানের কণ্ঠের প্রথম গান মুভি বোম্বের (১৯৯৫) হাম্মা হাম্মা। তবে বন্দে মাতরাম (বন্দে মাতরাম), লুকা ছুপি (রাঙ্গ দে বাসন্তী), তেরে বিনা (গুরু), খাজা মেরে খাজা (যোধা আকবর), ও... সয়া (স্লামডগ মিলিয়নেয়ার), রেহনা তু (দিল্লি-৬) ইত্যাদি ট্র্যাকগুলোকে তার ভোকাল মাস্টার পিস বলা যেতে পারে।

তিনিই একমাত্র ইন্ডিয়ান মিউজিশিয়ান, যার অ্যালবাম বিশ্বজুড়ে ২০ কোটি কপির চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছে।

আগামীনিউজ/নাসির