সড়ক দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু, ইয়াং স্টারের মঞ্চে মায়ের কান্না

বিনোদন ডেস্ক ডিসেম্বর ১০, ২০২১, ০৯:১৩ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকাঃ আরটিভি আয়োজন করেছে তরুণদের জন্য সংগীতবিষয়ক নতুন রিয়েলিটি শো  ‘ইয়াং স্টার’। ইয়াং স্টারের মঞ্চে মেয়েকে নিয়ে নিজের জীবনের লড়াইয়ের গল্প শুনিয়েছেন নীলফামারীর প্রতিযোগী রেশমার মা। তাদের মা-মেয়ের জীবন সংগ্রামের করুণ গল্প উপস্থিত সবার এবং দর্শকদের চোখ নোনা জলে ভরিয়ে দিয়েছে।

মায়ের শাড়ি কেটে জামা বানিয়ে ইয়াং স্টারের মঞ্চে গাইতে এসেছেন রেশমা। নীলফামারী থেকে ঢাকায় তাদের জার্নিটাও কম কষ্টের নয়। রাজধানীতে তাদের থাকার জায়গা নেই। নীলফামারী থেকে ঢাকায় পৌঁছে সকালে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে বসে থাকেন মা-মেয়ে। সেখান থেকে অডিশনের জন্য স্টুডিওতে আসেন। স্টুডিও খোলার আগ পর্যন্ত সামনের ফুটপাতেই বসে থাকেন তারা।

ছোটবেলায় মারা যায় রেশমার বাবা। মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার মা। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। মেয়েকে সুন্দর জীবন দিতে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করছেন। তাদের সংগ্রামের রয়েছে অনেক গল্প। ইয়াং স্টারের মঞ্চে রেশমাকে দেখে নিজেকে সার্থক ভাবছেন মা।

রেশমার গান শেষে তার মাকে মঞ্চে ডেকে নেন উপস্থাপকরা। মঞ্চে এসে তিনি বলেন, ‘আমাদের মা-মেয়ের স্ট্রাগল একধাপ এগিয়ে এসেছি। আমার মেয়ে যখন কেজি শ্রেণিতে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে সেসময় ওর বাবা বাস দুর্ঘটনায় মারা গেছে। যদিও নার্সারির শেষে আমি ওকে গানের শিক্ষকের কাছে দিয়েছিলাম কিন্তু ওর বাবার মৃত্যুর পর আর্থিক সংকটের কারণে আমি সেটা চালিয়ে যেতে পারিনি।'

এই প্রতিযোগিতার বিচারক আববার টিপু জানতে চান, ‘আপনি কী করেন? কোথায় কাজ করেন?’ জবাবে রেশমার মা বলেন, ‘আমার স্বামী আর্মিতে ছিল, সেই সুবাধে সৈয়দপুর নীলফামারী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরির সুযোগ হয়েছে।’

স্বামীর মৃত্যুর পর অকূল পাথারে পড়েন রেশমার মা। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর চার বছর আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। আমার একটাই চিন্তা, মেয়েকে আমি কীভাবে লেখাপড়া করাব। মেয়েকে একটা আইসক্রিম কিনে দেওয়ার টাকা আমার ছিল না। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। আমি দুনিয়াতে থাকব না, কিন্তু আমার মেয়ে যেন কারও বোঝা হয়ে না থাকে।’

রেশমার মায়ের কঠোর সংগ্রামের কথা শুনে বিচারকের আসনে বসা প্রতীক হাসান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি ফিল করছি আমার মা আমার জন্য কত কষ্ট করেছে। সশস্ত্র সালাম জানাই সেসব মায়েদের, যারা এত সংগ্রাম করেও ছেলে-মেয়েদের এই পর্যায়ে নিয়ে আসেন।’

সোহাগ মাসুদের প্রযোজনায় মিউজিক্যাল এই রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার প্রতিযোগী আবেদন করেন। এর মধ্য থেকে নিয়ম অনুযায়ী মোট পাঁচ হাজার প্রতিযোগীর গান রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রহণ করা হয়।

পরবর্তীতে ‘ইয়াং স্টার’-এর তিন বিচারক ইবরার টিপু, প্রতীক হাসান ও পড়শি যাচাই-বাছাই করে স্টুডিও অডিশন রাউন্ডের জন্য মোট ১৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানান। নির্বাচিত ১৫০ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে রাজধানীর তেঁজগাও-এ অবস্থিত আরটিভির নিজস্ব স্টুডিও বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়ায় শুরু হয় অডিশন রাউন্ড।

এই অনুষ্ঠানের প্রযোজক সোহাগ মাসুদ বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তরুণ সংগীত প্রতিভাকে সবার কাছে তুলে ধরতেই এই আয়োজনের পরিকল্পনা। অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি আমরা। ১২ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী গান পাঠিয়েছিলেন রেজিস্ট্রেশন করে। আশা করছি সবার মন ছুঁয়ে যাবে ‘ইয়াং স্টার’।

আগামীনিউজ/এসএস